সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়, কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা হয়। শাস্তির মাধ্যমে যদিও তাদের বোঝানো হয়, অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- পুলিশে অপরাধ কমছে না, বাড়ছে প্রতিদিন।
দিনাজপুরের খানসামায় ডলার দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে আটক হয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহীন ইসলাম।
গতকাল সোমবার (৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পাকেরহাট কইনাডুবি ব্রিজ মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে তাকে খানসামা থানা পুলিশ উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর জানা যায়, আটক শাহীন ঠাকুরগাঁও জেলা গোয়েন্দা পুলিশে এএসআই হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি খানসামা থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।
পরে ডলার ক্রেতা দিনাজপুর সদরের কমলপুর এলাকার যুবক আ. হান্নান বাদী হয়ে এএসআই শাহীন ও তার সহযোগী গোয়ালডিহি ইউনিয়নের শিমুলতলী এলাকার জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে উপজেলার পাকেরহাট কইনাডুবি ব্রিজ মোড়ে এএসআই শাহীনের কাছ থেকে ডলার কেনার জন্য আসেন দুই যুবক। কিন্তু ডলার না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শাহীন। সে সময় ডলার কিনতে এসে প্রতারণার শিকার দুই যুবক চিৎকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই শাহীনকে আটক করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
এ বিষয়ে খানসামা থানার ওসি চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, ‘শাহীনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলা করেন। এই চক্রকে ধরতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর জেল হাজতে পাঠানো হবে।’
এএসআই শাহীনের কাছ থেকে ডলার কেনার জন্য আসেন দুই যুবক। কিন্তু ডলার না দিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শাহীন। সে সময় ডলার কিনতে এসে প্রতারণার শিকার দুই যুবক চিৎকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই শাহীনকে আটক করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পরিপালন নিশ্চিত করা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপতৎপরতা-অনৈতিক থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়াও যুগোপযোগী আইনেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা যদি অনৈতিক কাজ করে আর শাস্তি যদি ১০০ টাকা হয় অপরাধ দমন তো হবেই না, বরং উৎসাহিত হবে। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ