চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জানে আলম হত্যা মামলায় হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে আসামি একই এলাকার আবুল কাশেমকে খালাস দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের কপি চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট আদালতে পৌছলেও তা কারাগারে পৌছায়নি। ফলে ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে কনডেম সেলে বন্দি আছেন ওই আবুল কাশেম।
এ অবস্থায় তার মুক্তির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
হাইকোর্ট থেকে খালাসের পরও সাত বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা আবুল কাশেমের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ২৫ আগস্ট হাইকোর্টের রেজিস্টারের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
খালাস পাওয়ার পরও সাত বছর ধরে আবুল কাশেমের কনডেম সেলে থাকা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি অনলাইন পোর্টাল। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শিশির মনির।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার জানে আলম হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান আবুল কাশেম। তার খালাস পাওয়ার আদেশ যথা সময়ে উচ্চ আদালত থেকে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে যায়। কিন্তু সাত বছর তিন মাস ১১ দিনেও আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি।
খালাস পাওয়ার আদেশ যথা সময়ে উচ্চ আদালত থেকে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে যায়। কিন্তু সাত বছর তিন মাস ১১ দিনেও আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল একটি মামলায় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত হাজিরা দিতে আসলে আবুল কাশেমকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে কারাগারে পাঠান। সেই দিন থেকে কারাগারের কনডেম সেলে আছেন তিনি। আবুল কাশেম লোহাগড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা আমিরখান চৌধুরী পাড়ার বেলায়েত আলীর ছেলে।
আবুল কাশেমের ছেলে ইফতেখার হোসেন নোহাশ বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। একটি মামলা ছিল, সেটাতেও জামিনে ছিলেন। আমার বাবার মুক্তি চাই।
আদালত সূত্র জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ রাজঘাটা আমিরখান চৌধুরী পাড়ায় জানে আলেম হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আবুল কাশেম। ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই আবুল কাশেমসহ ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৮ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। রায়ের সময় পলাতক ছিলেন আবুল কাশেম।
গত ২০১৩ সালের ১১ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও শহীদুল করিমের বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে আসামি আবুল কাশেমকে খালাস দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের ভাষায় একটা কথা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত আছে, প্রয়োজনে দশজন অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক তবুও যেন একজন নিরপরাধীর সাজা না হয়। বিশ্বের সমস্ত বিচার ব্যবস্থায় এই কথাটি মোটা অক্ষরে স্মরণে রাখা হয়। নিরপরাধীর সাজা যেন না হয় সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়। তারিখের পর তারিখ, বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই শেষে আদালত এইজন্যই বিচারের রায় প্রদান করে থাকেন যাতে ফাঁক-ফোঁকরে কোনো নিরপরাধীর সাজা না হয়ে যায়। বাংলাদেশেও এই রীতি রয়েছে। তবুও কোথায় কার যেন ভুলে কীভাবে যেন নিরপরাধীর সাজা হয়ে যায়। এদেশে এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে নিরপরাধীর সাজাভোগের উদাহরণ খুঁজে দেখলে দেখা যাবে প্রকৃত আসামির সংখ্যার চেয়ে অতো একটা কম নয়।
তারা জানান, একটা মানুষের খুন হওয়ার ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দ্রুততম সময়ে আসামির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। বছরের পর বছর কারাভোগের পর কেউ খালাস পেলেও তাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবিষয়ে উচ্চ মহলের কড়া নজরদারির আহ্বান জানান তারা।
তারা বলেন, স্পষ্টত হয়রানির উদ্দেশ্যে বিচারব্যবস্থার নামে এমন অপব্যবহার আশঙ্কাজনক। এই অপব্যবহার রোধে আদালতের নির্দেশ অনুসারে ওই ঘটনার দ্রুত ও সুচারু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যাতে এর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হয়। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীকে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩২
আপনার মতামত জানানঃ