বাংলাদেশে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত ঘটনাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য বা অবস্থান জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে জানানোর জন্য গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও ঢাকার পক্ষ থেকে সংস্থাটির কাছে আরও এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো উত্তর পাঠায়নি ঢাকা। ঢাকার পক্ষ থেকে ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আরও এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে জাতিসংঘের কাছে।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ যে বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে, সেটা আমরা তাদের পাঠাব। আমরা সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছি। তথ্য পেলেই আমরা জাতিসংঘের কাছে সাবমিট করব। ঈদের বন্ধসহ নানা কারণে সব উপাত্ত পেতে আমাদের কিছুটা সময় লাগার বিষয়ে জাতিসংঘকে অবহিত করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও ঢাকার পক্ষ থেকে সংস্থাটির কাছে আরও এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে।
গত ২৭ জুন নিউইয়র্কের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে লেখা অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের রিপোর্টে ১ মে ২০২১ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত সময়কালে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ঘটনাগুলো স্থান পাবে। ওই সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার সংবেদনশীল কিছু ঘটনা রয়েছে, সে সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ওই সব কেসের বিষয়ে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের বক্তব্য পাওয়া জরুরি। অন্যথায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিব যে বাৎসরিক রিপোর্ট পেশ করতে যাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের ভাষ্য অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মহাসচিবের রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত তারিখের পর কারও কোনো বক্তব্য দেওয়ার অবকাশ নেই। বরং তা দিলেও গৃহীত হবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের মূল ভূমিকা কী হওয়া উচিত? দেশে দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংক্রান্ত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। রাষ্ট্র মানবাধিকার সংক্রান্ত স্বীকৃত মানদণ্ডগুলো মেনে চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে, ব্যত্যয় ঘটলে রাষ্ট্রকে সঠিক পথ দেখায়, করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করে। আমাদের দেশেও একটি স্বতন্ত্র আইন দ্বারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে। যাকে মানবাধিকার প্রচার ও প্রসারে একটি বিস্তৃত এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুব বেশি না হলেও কমিশন থেকে এইটুকু প্রত্যাশা করা যায়, কমিশন তার নিজের এখতিয়ার অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষত রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেখানে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। যা প্রায়শ দৃশ্যমান হচ্ছে না বলেই নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। কমিশন মানবাধিকার, অপরাধ সংগঠন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে পার্থক্য কিংবা তাদের প্রতিষ্ঠা আইন— জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ এর আওতায় দেওয়া এখতিয়ার সম্পর্কে কতটা ওয়াকিবহাল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি কমিশন কীভাবে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের নাগরিক সংগঠনগুলো থেকে আলাদা করছে, তাও তাদের কার্যক্রমে ষ্পষ্ট হয়নি।
তারা বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যেন তার ম্যান্ডেট সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে এবং রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংক্রান্ত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য কমিশনের ম্যান্ডেট সম্পর্কে কমিশন ও সরকার উভয় পক্ষকেই সচেতন থাকতে হবে। কেবলমাত্র একটি ‘নখদন্তহীন বাঘ’ হিসেবে কমিশন থেকে গেলে তা প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকারের প্রসার ও রক্ষায় খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং তা দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ইমেজ সংকট তৈরি করবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই আইন সংশোধনের মাধ্যমে কমিশনের সদস্য বাছাই প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক করা, মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কমিশনে প্রাধান্য দেওয়া, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা প্রদান, কমিশনের অনুরোধের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও যথাযথ সাড়া প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ