তিন দশক আগে থেকেই দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ছিল স্বল্পসংখ্যক পণ্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সে সময় রপ্তানি পণ্য তালিকা প্রণয়ন করতে গেলে পাট ও চায়ের পর অনিবার্যভাবে যে পণ্যটির নাম চলে আসত তা হলো চামড়া। এখন তৈরি পোশাক শিল্পের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া। কিন্তু প্রথমটির সঙ্গে এই দ্বিতীয়টির ব্যবধান আকাশ-পাতাল।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়লেও কমেছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। এক দশক ধরেই চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কোরবানিদাতারা। সবশেষ ঈদুল আজহায় ন্যায্যমূল্য দূরের কথা, চামড়া বিক্রির জন্য অনেক এলাকায় ক্রেতারই খোঁজ মেলেনি। এবছরও বিশেষ কোনো সুখবর নেই কোরবানিদাতাদের জন্য। এমনটাই দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি মালিক ও আশপাশে গড়ে ওঠা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, চামড়ায় ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের কেমিক্যালের (রাসায়নিক) দাম বাড়ার পাশাপাশি লবণের দামও বেড়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বাড়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কাঁচা চামড়ার দামে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও দেশের চামড়ার বাজার শুধু চীনকেন্দ্রিক হওয়ায় সেই সুফলও পাবেন না বিক্রেতারা। অর্থাৎ দাম বাড়বে না। সবমিলে চামড়া আগের মতো বিক্রি হবে পড়তি দরেই।
প্রতি বছর চামড়া নিয়ে অরাজকতা
বাংলাদেশে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আযহা। এক দশক আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সেই একই চামড়া ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবছর চামড়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। দেশে মোট চামড়ার প্রায় ৮০ শতাংশ সংগৃহীত হয় কুরবানির ঈদের সময়। অথচ গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির চামড়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা, নদী-নালা বা রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রশ্ন হলো, প্রতিবছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কেন? এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য কুরবানির চামড়ার মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়নি; দেওয়া হয়েছে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য।
সাধারণত লবণযুক্ত চামড়ার ক্রেতা ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা। ফলে মূল্য বেঁধে দেওয়ার মধ্যে অস্বচ্ছতার কারণে আবারও চামড়ার বাজারে মূল্য নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন একদিনের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আমরা লক্ষ করেছি, ট্যানারি ও আড়তদারদের কারসাজিতে অতীতে বেঁধে দেওয়া চামড়ার মূল্য কার্যকর হয়নি।
কুরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে সাধারণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন যারা চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদার। তারা হলেন দেশের হতদরিদ্র মানুষ। প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার কারণে চামড়ার একটি বড় অংশ নষ্ট করে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামগ্রিকভাবে চামড়া শিল্প। আমাদের রপ্তানি পণ্যের খাত সীমিত। কাজেই কারও কারসাজির কারণে চামড়া শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার দাম ৮০-১০০ টাকা হলেও এ দেশে মাত্র ২৫-৩০ টাকা। এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে সে দেশে পাচার কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। সূত্র মতে, এবারও অবৈধ পথে ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরার পুরো সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা পুলিশ। সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে টহলও। সীমান্তের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এছাড়া, প্রতিবছরই কুরবানির পশুর চামড়া কিনতে দেওয়া হয় সহজে ঋণ। কিন্তু আদায় হয় না। এছাড়া চামড়া খাতে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন সময় বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের অর্থ নিজের মনে করে খেয়ে ফেলছে ফেরত দিচ্ছে না। ফলে এ খাতে মন্দঋণ ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে চামড়া খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তিন মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বর প্রান্তিকে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ আর খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ২৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত চামড়া খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক ৭ হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণের ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।
বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিয়েছে ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২৬ কোটি ৫২ লাখ বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিয়েছে ১৮২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
কেন কমছে চামড়ার দাম?
পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) মান সনদ অর্জন করতে পারছে না। সারা বিশ্বের ৬৬টি বড় ব্র্যান্ড এই গ্রুপের সদস্য। এলডব্লিউজি মান সনদহীন ট্যানারি থেকে তারা চামড়া কেনে না। পরিবেশ সুরক্ষা, বর্জ্য পরিশোধন, কাঁচামালের উৎস, জ্বালানি ও পানির ব্যবহার ইত্যাদি বিবেচনা করা হয় এই সনদের ক্ষেত্রে।
বিশ্বের ৪৪০টি কারখানা এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ২৪২টি গোল্ড সনদ। ভারতে এই সনদপ্রাপ্ত ট্যানারি ১০৫টি, চীনে ৭৫টি, ব্রাজিলে ৬৩টি, ইতালিতে ২৬টি, ভিয়েতনামে ১৪টি, পাকিস্তানে ৩টি এবং বাংলাদেশে মাত্র ১টি। ২০১৫ সালে এপেক্স ফুটওয়্যারের ট্যানারি ইউনিট এলডব্লিউজির নিরীক্ষায় সেরা মান অর্থাৎ গোল্ড সনদ বা সেরা মানের কারখানার মর্যাদা পায়।
সিন্ডিকেটের উত্থান
এছাড়া আর একটি কারণ, পুরো ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের তৈরি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রশ্ন উঠেছে চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেট কারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া দর অনুযায়ী লবণ মিশ্রিত চামড়া ২০ বর্গফুটের একটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছয়শ থেকে সাতশ টাকা। সেখানে লাভের আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাসা-বাড়ি থেকে চামড়া কিনেছেন তিনশ থেকে চারশ টাকা দরে। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা।
আড়তদাররা চামড়া কেনার টাকার অভাব আর সংরক্ষণের কথা বলে জটিল সমীকরণে ফেলে দেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ফলে আড়তদাররা সরাসরি চামড়া না কেনায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় চামড়া নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করে। পরে চামড়া নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে নামমাত্র মূল্যে লোকসানে বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
আর কম দামে কিনে মধ্যসত্ত্বভোগীরা মুনাফা রেখেই সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। যা পরে আড়তদাররা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে কিংবা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করেন। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা মধ্যসত্ত্বভোগী তৈরি করে মাঝখান থেকে বেশি লাভবান হয় বলে জানা যায়।
আন্তর্জাতিক বাজার ও কেমিক্যালের দাম
এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, চামড়ার দাম আন্তর্জাতিক বাজার, কেমিক্যালের দাম, লবণের দাম ও দেশি বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার সামান্য ইতিবাচক থাকলেও অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থা রয়েছে। তাই দাম ওঠা কঠিন।
কোরবানির পর মানুষের বাসা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পরে তারা আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। সাধারণত মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়ার আকার হয় ২৫ বর্গফুট পর্যন্ত। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় এক হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। ঢাকার বাইরে দাম হওয়ার কথা ৭শ থেকে ৯শ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ঢাকায় ৭শ টাকা ও বাইরে ৫শ টাকার বেশি দাম মেলেনি।
এর পেছনে বেশি কিছু কারণ আছে। আমাদের দেশ চামড়ার ক্ষেত্রে শুধু চায়নাকেন্দ্রিক ব্যবসা করছে। যেখানে ইউরোপে প্রতি বর্গফুট চামড়া দুই ডলার ৮০ সেন্ট, সেটা চায়নায় ৯০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও দেশে সে প্রভাব পড়বে না।
এদিকে, চামড়া ফিনিশিং পর্যন্ত ৯২ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। দেশি-বিদেশি প্রতিটি কেমিক্যালের দাম বেড়েছে। বাড়তি লবণের দামও। যে কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ খরচ ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ছিল।
লবণের দাম
প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে গড়ে ৮ কেজি লবণ লাগে। রোজার আগে যে লবণের বস্তা (৬০ কেজি) সাড়ে চারশ টাকা ছিল, সেটা এখন ৮৭০ টাকা। যে কারণে খরচ অনেক বেড়েছে।
চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। এরপরও রোজার পর থেকে দফায় দফায় বেড়েছে মোটাদানার লবণের দাম। ঈদ কেন্দ্র করে যা আরো বাড়ছে। যদিও মিল মালিকদের দাবি, দেশে লবণের ঘাটতি আছে। আর চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, কোরবানি ঈদে পশুর চামড়ার দামে বাড়তি দাম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জানা গেছে, এখনো দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টন লবণ মজুত রয়েছে। পাশাপাশি আমদানির অপেক্ষায় দেড় লাখ টন লবণ। যেখানে আসন্ন ঈদে পশুর চামড়ার জন্য প্রয়োজন হবে ৫৫ থেকে ৫৬ হাজার টন। সেই বিবেচনায় আসন্ন কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের সংকট হওয়ার কথা নয়। তারপরও বাজারে বেড়েছে দাম।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর লবণের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারাকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কারও বিরুদ্ধে দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা, জরিমানার পাশাপাশি দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য বলছে, আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার দেশে লবণের উৎপাদন সন্তোষজনক। ২০২১-২২ মৌসুমে লবণের মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন, যা বিসিক লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে (৬১ বছর) রেকর্ড। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। এ হিসাবে দেশে এখন মজুত লবণের পরিমাণ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টনের মতো।
এ পরিস্থিতিতেও বাজারে এখন মোটাদানার লবণের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৫০ থেকে ২শ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১শ টাকায়। এছাড়া নিম্নমানের অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি (৬০ কেজি) ৮৭০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও ২শ থেকে ৩শ’ টাকা কম ছিল।
হুট করে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ খরচ ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে বেড়েছে কিছু কেমিক্যালের দামও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চামড়া খাতকে শক্তিশালী করতে ট্যানারি কারখানার আধুনিকায়ন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঠিক পদ্ধতিতে পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ, সংরক্ষণ এবং পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক প্রচার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কোরবানির ঈদের সময় আমরা সিংহভাগ চামড়া পেয়ে থাকি। আর এসব চামড়ার মানও ভালো। তবে পরিবহন ব্যবস্থা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আরও সচেতন হতে হবে। আর এ সময়েই সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে বিপুল সম্ভাবনার এ খাতকে অস্থির করতে চায় কেউ কেউ। এ সময়ে সরকার আরও কঠোর ভূমিকা পালন করলে ভালো হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিবেক জাগ্রত না হলে এই সম্ভাবনা অধরাই রয়ে যাবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ