বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাহফুজ (৩৫) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১২। সোমবার (১৩ জুন) বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার (১২ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার চাঁপাপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া র্যাব ক্যাম্পের একটি দল। গ্রেপ্তার মাহফুজ আদমদীঘির চাঁপাপুর এলাকার আড়াইল ফয়জুল উলুম কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি চাঁপাপুর বাজার এলাকার মোহাম্মদ আলী কাজীর ছেলে।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলার উত্তর চেলোপাড়ার ওই শিক্ষার্থী (১২) উপজেলার সিদ্দিক হোসেন এতিম খানার আবাসিক বোর্ডিংয়ে থেকে ওই মাদ্রাসায় মক্তব শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। গত ১ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া শেষে সে মক্তবখানায় শুয়ে পড়ে। ওই সময় মাদ্রাসার শিক্ষক মাহফুজ ওই ছাত্রকে পাশের হেফজখানা রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে।
গত ৪ জুন ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসাছাত্রকে দেখার জন্য তার মা মাদ্রাসায় আসলে ওই ছাত্র তার মাকে বিষয়টি জানায়। ছাত্রের মা মাদ্রাসার সভাপতি মকলেছার রহমানকে জানালে ওই ছাত্রের মাকে তিনি আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা না করে অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে তাড়িয়ে দেন।
এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে শনিবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শুক্রবার দিবাগত রাতে বগুড়া র্যাব-১২ এর সহযোগিতায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চাঁপাপুর এলাকা থেকে শিক্ষক মাহফুজকে গ্রেপ্তার করে।
আদমদীঘি থানার ওসি জালাল উদ্দীন বলেন, মাদ্রাসাছাত্র ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একদিন তারাও শিশু ছিলেন। তাই শিশুদের নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো খোদ মাদ্রাসা শিক্ষক তথা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৫
আপনার মতামত জানানঃ