আলবার্ট আইনস্টাইন! বিজ্ঞান জগতের এক অন্যন্য স্রষ্টা এবং সংস্কারকের নাম। তিনি বিজ্ঞানকে দিয়েছেন নতুন এক পরিচয়। যে বিজ্ঞান স্থান, কাল আর ব্যক্তির উর্দ্ধে। বিজ্ঞান জগতে তিনি থিওরী অব রিলেটিভিটি বাংলায় যার নাম অপেক্ষিকতাবাদ এর সংস্কারক কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা।
আলবার্ট আইনস্টাইনকে মানব ইতিহাসের সবথেকে বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলা হয়। আইনস্টাইন এতোটাই মহান ও লোকপ্রিয় ছিলেন যে তিনি যখনি বাইরে বেরোতেন মানুষ তাকে রাস্তায় দাঁড় করে তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করতেন।
আইনস্টাইন জার্মান সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহন করেছিলেন। তার পিতা একটি তড়িৎরাসায়নিক কারখানা পরিচালনা করতেন। তবে আইনস্টাইন ১৮৯৫ সালে সুইজারল্যান্ডে চলে আসেন এবং পরের বছর জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতে বিশেষায়িত হওয়ায় ১৯০০ সালে জ্যুরিখের ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুল থেকে একাডেমিক শিক্ষা ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পরের বছর তিনি সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন, যা তিনি আর ত্যাগ করেননি। প্রাথমিকভাবে কাজ সন্ধানের জন্য সংগ্রাম করতে হলেও ১৯০২ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত বার্নের সুইজারল্যান্ডীয় পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট পরীক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আলবার্ট আইনস্টাইনের বাল্য জীবন রহস্য ও অলৌকিকতায় ভরপুর, আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্বাভাবিক ছিলোনা তার বাল্যকাল।
জন্মের সময় তারমধ্যে এমন একটি পার্থক্য ছিলো যা অন্য বাচ্চার থেকে তাকে আলাদা দেখাত। সেটি ছিলো তার মাথার আকৃতি, আইনস্টাইনের মাথার আকার অন্য বাচ্চাদের থেকে আকারে বড় ছিলো।
ডাক্তার আইনস্টাইনের কথা বলতে পাড়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণটি ছিলো তার মাথার বড় আকৃতি, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে চার বছর বয়সে এক রাতের খাবার খাওয়ার সময়ে আইনস্টাইন পরিবারের সবাইকে অবাক করে বলে ওঠেন স্যুপটি খুব গরম। তার কণ্ঠস্বর শুনে তার পিতা মাতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
আইনস্টাইন ছোটবেলা থেকেই তার সমবয়সি বালকদের সাথে বেশি মিশতেন না এবং খেলতে পছন্দ করতেন না। সে সবসময় আশপাশের বিভিন্ন বস্তু ও বিশ্ব জগতের বিষয়ে চিন্তা করায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন সবসময় বলতেন যে আমার মধ্যে এমন বিশেষ কোনো গুন্ নেই যেটা আপনারা ভাবেন, আমিতো এমন একজন ব্যাক্তি যার মনের মধ্যে জিজ্ঞাসা ও জানার ইচ্ছায় পরিপূর্ণ।
আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। সবচেয়ে বিখ্যাত অবদান আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব (যা বলবিজ্ঞান ও তড়িচ্চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিল) এবং আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (যা অসম গতির ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল)।
তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব, কৈশিক ক্রিয়া, ক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসংখ্যানিক বলবিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যা তাকে অণুর ব্রাউনীয় গতি ব্যাখ্যা করার দিকে পরিচালিত করেছিল, আণবিক ক্রান্তিকের সম্ভ্যাব্যতা, এক-আণবিক গ্যাসের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকরণ ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম (বিকিরণের একটি তত্ত্ব যা ফোটন তত্ত্বের ভিত্তি রচনা করেছিল), একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন এবং পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ করেছিলেন।
আইনস্টাইন ৩০০টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এবং ১৫০টির বেশি বিজ্ঞান-বহির্ভূত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি ভোটের মাধ্যমে জানা গেছে, তাকে প্রায় সকলেই সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
দৈনন্দিন জীবনে মেধাবী এবং প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে প্রায়শই ‘আইনস্টাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়। অর্থাৎ এটি প্রতিভা শব্দের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ইউজিন উইগনার তাকে তাঁর সমসাময়িকদের সাথে তুলনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন যে ‘জেনসি ভন নিউম্যানের চেয়ে আইনস্টাইনের বোধশক্তি আরও বেশি প্রখর ছিল। তার চিন্তাশক্তি নিউম্যানের চেয়ে ভেদ্য এবং বাস্তবিক ছিল’।
তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তার বিশেষ অবদান এবং আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণার জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৫৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ছবি: https://rarehistoricalphotos.com/
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৮
আপনার মতামত জানানঃ