জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদেরকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘরই ইতোমধ্যে ধসে গেছে। অল্প বৈরী আবহাওয়াতেই এসব ঘর ধসে পড়ছে। কোথাও এমনি এমনিতেই ধসে পড়ছে। আর যেসব ঘর এখনো ধসে পড়েনি, বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেসব ঘরে বসবাস করতে তারা ভয় পাচ্ছেন।
মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না— এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের ঘাটাইলেও ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়া হয়। সেই ঘরগুলো বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। নির্মাণের কিছুদিন না যেতেই দেখা দেয় ফাটল। পরবর্তীতে সংস্কার করে দেয়া হলেও, বর্তমানে আবারও বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। খসে পড়ছে ঘরের পলেস্তার। বাসিন্দাদের দিন কাটে আতঙ্কে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
এছাড়াও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাসহ রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। ফলে ঘরগুলো দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এমন দশা হয়েছে। এদিকে গণমাধ্যমের খবরে তড়িঘড়ি করে ফাটল মেরামতের কাজে হাত দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে এমন কাজে নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ২৭৬টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে গৌরিশ্বর এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৪টি ঘর। ঝড় আসলে আতঙ্কে দিন কাটে বাসিন্দাদের। এতে করে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
উপজেলার গৌরিশ্বর আশ্রয়ণ প্রকল্প্রের ১ নম্বর ঘরের মাজেদা, ৫ নম্বর ঘরের পারভিন ও ১১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা লিজাসহ আরও অনেকেই বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অনেক খুশি। কিন্তু ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝড়ের সময় শিশু সন্তান নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এমন দশা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, যে খুশিতে ঘরে উঠছিলাম তা আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। মাঝে মধ্যে ফাটল মেরামত না করে স্থায়ী মেরামত ও ঘর পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাস্তার সমস্যা। আশেপাশে কোনো মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। অনেক দূরবর্তী স্থানে স্কুলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যেত হয়। এতে কাজের ক্ষতি হয়।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, মাটির কারণে কয়েকটি ঘরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারদের বলে তা মেরামত করে দেয়া হবে। ঘর নির্মাণে আগে মাটি পরীক্ষা করে নেয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, দেশে দুর্নীতি কোন স্তরে পৌঁছেছে। দুর্নীতিবাজরা কতটা ধৃষ্ট হলে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পেও লুটপাট চালাতে পারে। কতটা অমানবিক হলে তারা অসহায় মানুষদের জন্য নেয়া একটি মানবিক প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে পারে।
তারা বলেন, শুধু ওএসডি করে বা বিভাগীয় মামলা দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির সুরাহা করলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প নিয়ে, গৃহহীনদের ঘর নিয়ে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অপরাধী যে বা যারাই হোক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও খতিয়ে দেখতে হবে।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যেসব ঘর ভেঙে গেছে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৩
আপনার মতামত জানানঃ