১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতাযুদ্ধে (সিপাহি বিদ্রোহে) অংশগ্রহণকারী ২৮২ জন ভারতীয় সৈন্যের কঙ্কাল অমৃতসরের কাছে নৃতাত্ত্বিক খননকাজের সময় পাওয়া গেছে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জে এস সেহরাওয়াত এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর এনডিটিভির।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জে এস সেহরাওয়াত জানান, অমৃতসরের অজনালায় একটি ধর্মীয় কাঠামোর গভীরে খননকাজের সময় একটি কুয়া পাওয়া যায়।
খবরে বলা হয়েছে, ১৮৫৭ সালে বন্দুকের কার্তুজে শূকর ও গরুর মাংসের চর্বি ব্যবহারের প্রতিবাদে বিদ্রোহ করেছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় সেনারা।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে একটি নৃতাত্ত্বিক খননকাজের সময় এ দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যায়ের নৃতত্ত্ববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর জে এস সেহরাওয়াত বলেন, ‘এই সেনারা ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ২৮২ সেনার দেহাবশেষ পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে আজনালায় একটি ধর্মীয় স্থাপনার নিচে খননের সময় পাওয়া যায়।’
অধ্যাপক সেহরাওয়াত বলেছেন, দেহাবশেষগুলোর সঙ্গে পাওয়া ধাতব মুদ্রা ও পদক ছাড়াও ডিএনএ পরীক্ষার পরই তারা এ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন। ভারতে ইংরেজ শাসনের রমরমার সময় ১৮৫৭ সালের দিকে সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত বন্দুকের কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বি মেশানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই কার্তুজটি বন্দুকে ভরার আগে দাঁত দিয়ে কেটে নিতে হতো। দেশীয় হিন্দু ও মুসলিম সেনাদের মধ্যে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে, তাদের ধর্মবিশ্বাসের ক্ষতি করতেই ব্রিটিশরা ইচ্ছা করে এ রকম কার্তুজ বানিয়েছে। এর সঙ্গে আর্থিক বৈষম্যসহ বাহিনীতে বিভিন্ন বঞ্চনার কারণে জন্ম নেওয়া ক্ষোভ সে বছরই জন্ম দেয় সিপাহি বিদ্রোহের। এই বিদ্রোহে সিপাহিরা ইংরেজদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়। আটক বিদ্রোহী সেনাদের ফাঁসি ও কামানের গোলার মুখে উড়িয়ে দেওয়াসহ কঠিন সাজা দেয় ইংরেজরা।
ইতিহাসবিদদের অনেকে মনে করেন, ১৮৫৭ সালে ঘটা সিপাহি বিদ্রোহই ভারতের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রাম। এর পরপরই লন্ডনের ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির হাত থেকে ভারতের সরাসরি শাসন হাতে তুলে নেয়।
১৮৫৭ এর ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে একটি বড় প্রতিরোধ ছিল। ১৮৫৭ সালের ১০ মে দিল্লির ৬৪ কিমি উত্তর-পূর্বে মিরাটের গ্যারিসন শহরে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এটি ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ। ক্রমশ গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। যা দেশের ইতিহাসে সিপাহি বিদ্রোহ নামেই পরিচিত।
এই বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল। নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল বহু নিরপরাধ নরনারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। সেই সময়ের সেনাদের এবার কঙ্কাল মিলল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৯
আপনার মতামত জানানঃ