খাবারের বিশাল থালার চারপাশে মাত্র দু’চারজন লোক। থালার মধ্যে বিরিয়ানির সঙ্গে আস্ত খাশি বা ছোটখাটো উট ভুনা রয়েছে, চারপাশে আছে হরেক রকম ফল। কোমল পানীয়ও রয়েছে কয়েক পদের।
এটি সৌদি আরবের যে কোনো পরিবারের ছোটোখাটো উৎসবে খাওয়ার চিত্র। স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে যে খাবার খাওয়া হয় তাতেও পদের কোনো অভাব থাকে না।
অথচ তেলসমৃদ্ধ এই দেশটির প্রতিবেশী ইয়েমেনের চিত্রটি ঠিক এর বিপরীত। দেশটির প্রায় দেড় কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। নিজেদের দোষে নয়, বরং সৌদি আরবের হামলার কারণেই ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। মানবতার এই পরাজয় সৌদি শাসক তো দূরের কথা দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের বিবেককেও নাড়া দেয় না।
প্রতিবছর প্রায় ৪০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খাবার নষ্ট হয় সৌদি আরবে। একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ।
এ নিয়ে সৌদি ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর রিডিউসিং ফুড লস অ্যান্ড ওয়েস্টের পরিচালক যায়েদ আল শাবানাত বলেন, বুফে সৌদি আরবে খাদ্য অপচয়ের একটি কারণ।
আল আরাবিয়া টিভিকে শাবানাত বলেন, সৌদি গ্রেইন অর্গানাইজেশনের (এসএজিও) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ৪০ বিলিয়ন রিয়াল মূল্যের খাবার নষ্ট হয় সৌদি আরবে।
সৌদি ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর রিডিউসিং ফুড লস অ্যান্ড ওয়েস্টের পরিচালকের মতে, এ সমস্যা সমাধানে সমাজের সচেতনতাই মুখ্য।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের মধ্যেও সৌদিতে কোনো গমের ঘাটতি নেই বলে জানান যায়েদ আল শাবানাত।
তিনি বলেন, এসএজিও বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে। তাই সৌদির অবস্থান ভারসাম্যপূর্ণ।
অথচ তেলসমৃদ্ধ এই দেশটির প্রতিবেশী ইয়েমেনের চিত্রটি ঠিক এর বিপরীত। দেশটির প্রায় দেড় কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। নিজেদের দোষে নয়, বরং সৌদি আরবের হামলার কারণেই ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট লোকসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন অর্থাৎ ৯৬০ কোটি। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ আসবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে এবং অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান লোকসংখ্যার অর্ধেক আসবে শুধু আফ্রিকা থেকে। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা ভেবে কূল পাচ্ছেন না, এসব মানুষের খাবারের সংস্থান হবে কীভাবে!
জাতিসংঘের মতে, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের দবকার হবে না। বিশ্বব্যাপী খাবারের যে অপচয় হয় তা রোধ করা গেলে এবং সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা গেলে বিশ্বের কাউকেই না খেয়ে থাকতে হবে না।
প্রতি বছর ১ কোটি ৫০ লাখ শিশু মারা যায় ক্ষুধার্ত অবস্থায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষুধার্ত। প্রতি ৩.৬ সেকেন্ডে কোনো একজন মারা যায় ক্ষুধার তাড়নায়। আমাদের উপমহাদেশ এবং আফ্রিকায় বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস। ৯০-এর দশকে দশ কোটির বেশি শিশু ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। এ লেখাটি পড়তে পড়তেই কম করে হলেও ২০০ মানুষ ক্ষুধায় মারা যাবে এবং বছরান্তে এ সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৪০ লাখে।
পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব মানুষের ৮০ শতাংশ শিশু ও মহিলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ৫০ কোটি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়স্ক প্রায় ৮৫ লাখ শিশু নামেমাত্র বেঁচে থাকলেও উপবাসের কারণে এরা কোনো না কোনো সময় মৃত্যুবরণের জন্য দিন গোনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমরা এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি যেখানে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্ষুধা ও অপুষ্টি এক চিরন্তন সত্য, খরা, যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে মাইগ্রেশন বা অভিবাসন, খাদ্যসামগ্রীর ঊর্ধ্বমূল্য, সামাজিক অস্থিরতা, বঞ্চনা, বৈষম্যমূলক বণ্টন ব্যবস্থার কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে এবং মৃত্যুবরণ করছে, সেই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের এ অসহনীয় অপচয় মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনকই শুধু নয়, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও এক জঘন্য মানবিক অপরাধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩১
আপনার মতামত জানানঃ