বাংলাদেশে পুরোনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় একটি ইসকন মন্দিরে একদল দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়ে সীমানা প্রাচীরের একটা অংশ ভেঙেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পেছনে জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলা হয়েছে।
হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, মন্দিরের জমি নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে বিরোধ থেকে এই হামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার স্থানীয় সফিউল্লাহ এবং তার ছেলে ইসরাফ সুফির বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় মামলা করেছেন মন্দিরের সেবক সুমন্ত চন্দ্র।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শতাধিক ব্যক্তি এই হামলায় অংশ নেয় বলে মন্দির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ওই মন্দিরের পুরোহিত অমানি কৃষ্ণ দাশ বলেন, দুই থেকে আড়াই শ ব্যক্তি মন্দিরে হামলা করেছে। দুজনকে আহত করা হয়েছে। মন্দিরের সংস্কারকাজের জন্য রক্ষিত মালামাল দুটি ট্রাকে করে নিয়ে গেছে।
করেছেন, দুস্কৃতকারীরা আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভাঙার সময় প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুরোহিতের দু’জন সহকারী আহত হয়েছে।
মন্দিরে হামলার অভিযোগ ওঠার পর শুক্রবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে সাড়ে ১৬ কাঠা জায়গার মধ্যে মন্দির। এই মন্দিরের দেড় কাঠা জমি সফিউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু মন্দিরের জমি দেবোত্তর হওয়ায় সেটি ক্রয়ের সুযোগ নেই। ওই জমি দখল করতেই সীমানাপ্রাচীর ভাঙা হয়েছে। তবে সেখান থেকে মালামাল নেওয়ার কোনো আলামত চোখে পড়েনি।
পুলিশের বক্তব্য
তবে পুলিশ বলছে, মামলার প্রধান আসামি সফিউল্লাহর সঙ্গে মন্দিরের পাশে একটি জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে মামলাও চলমান আছে। সফিউল্লাহ ওই জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সেটি দখলের চেষ্টা করেছেন। মন্দিরের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। জমি নিয়ে বিরোধের কোনো তথ্যই মামলার এজাহারে উল্লেখ নেই।
ঘটনার পর মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ।
তিনি বলেন, ওই জমিতে একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর রয়েছে। জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সেটি দখলের চেষ্টা করেছিলেন সফিউল্লাহ। ওই সীমানাপ্রাচীরটি মন্দিরের নয়।
মূলত যা ঘটেছে
তবে মন্দিরটিতে বৃহস্পতিবার আসলে কী ঘটেছে, সেই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
মন্দিরের পুরোহিত অমানি কৃষ্ণ দাশ বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর শ’দুয়েক লোক এসে মন্দিরের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং মন্দিরের পুরোহিতের দু’জন সদস্য প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা তাদেরও আক্রমণ করে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সীমানা প্রাচীর ভাঙার পর হামলাকারীরা মন্দির চত্বরে ঢুকে সেখানে থাকা একটি মূর্তি এবং নির্মাণ কাজের কিছু লোহার রড নিয়ে যায়।
কিন্তু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি দল আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মন্দিরটির সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ ভাঙা ছাড়া মূর্তি নেয়া বা লুটপাটের কোন তথ্য পায়নি।
ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ তাদের সংগঠনের ঐ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন।
তিনি বলেছেন, সেখানে পরিদর্শন করে তারা শুধু দেখতে পেয়েছেন যে মন্দিরটির প্রাচীন জরাজীর্ণ সীমানা দেয়ালের একটা অংশ হামলাকারীরা ভেঙেছে। সে সময় বাধা দিতে গিয়ে পুরোহিতের দু’জন সহকারী আহত হয়েছেন।
এছাড়া মন্দিরের ভেতরে হামলাকারীদের অন্য কোন অঘটন ঘটানোর কোন তথ্য তারা পাননি। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, সে ব্যাপারে অবশ্য সবপক্ষই জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলেছে।
নিন্দা-প্রতিবাদ
এই হামলার প্রতিবাদে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শিগগিরই দুষ্কতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ভূমিদস্যু, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প সৃষ্টিকারীদের হাত থেকে মন্দির রক্ষায় প্রশাসন যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। গতকাল শনিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়।
আরএসএস নেতার নিন্দা
পুরান ঢাকার ইসকন মন্দিরে ‘হামলার’ নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইন্দ্রেশ কুমার।
বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা দিতে সরকার ‘পুরোপুরি ব্যর্থ’ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই আজ শনিবার এই খবর প্রকাশ করেছে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দ্রেশ কুমার কংগ্রেসসহ ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ‘ধর্ম–বর্ণের রাজনীতির’ ঊর্ধ্বে উঠে ঢাকার ওই ঘটনার নিন্দা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধে ঢাকার ওপর চাপ তৈরি করতে নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইন্দ্রেশ কুমার ভারতের ‘মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের’ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিও ইসকন মন্দিরে ‘হামলার’ নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ