যখন তখন কল ও এসএমএস দিয়ে গ্রাহকদের বিরক্ত করা বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোন (জিপি) এখন গ্রাহক হয়রানিতেও শীর্ষস্থান দখল করেছে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একটি হিসাবে উঠে এসেছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশের ৪টি মোবাইল অপারেটর তাদের গ্রাহকদের দিনে প্রায় ১৫২ কোটি প্রমোশনাল এসএমএস পাঠায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের এবং সবচেয়ে কম এসএমএস পাঠায় টেলিটক।
বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশের চার মোবাইল অপারেটর তার গ্রাহকদের দিনে গড়ে ১৫১ কোটি ৮৫ লাখ এসএমএস পাঠায়। এটা একটা গড় হিসাব। কোনো দিন এই সংখ্যা বেশি হয়, আবার কোনো দিন এ সংখ্যাটা কিছুটা কমে।
হিসাব বলছে— ৪টি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসএমএস দেয় গ্রামীণফোন। তারা দৈনিক গড়ে ৬৫ কোটি এসএমএস দেয় গ্রাহকদের। দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি পাঠায় ৬২ কোটি ৮৫ লাখ, বাংলালিংক পাঠায় ২২ কোটি এবং টেলিটক ২ কোটি এসএমএস-নোটিফিকেশন পাঠায় গ্রাহকদের।
এসব এসএমএসের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন, অফার, ইন্টারনেট প্যাকেজ, মিটিন প্যাকেজ, মিসডকল অ্যালার্ট, ডিঅ্যান্ডডি, কলড্রপ, আমার টিউনের মতো সেবা চালু বা বন্ধকরণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসাইট সাইনআপ, লগইন, পাসওয়ার্ডের ওটিপি সংক্রান্ত এসএমএস, নবায়ন অ্যালার্ট, বন্ধ, সাবস্ক্রিপশন-আনসাবস্ক্রিপশনের নোটিফিকেশন।
এছাড়া রয়েছে এফএফএস, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, রিটেইলারসহ সব ধরনের রিচার্জ ও বিল পরিশোধ নোটিফিকেশন, বন্ধ সিম সক্রিয়, ফোরজি সিমের অফার, সিম প্রতিস্থাপন, মালিকানা পরিবর্তনসংক্রান্ত নোটিফিকেশন, লয়ালিটি ও পার্টনারশিপ সংক্রান্ত নোটিফিকেশনসহ নানা ধরনের এসএমএস। এর বাইরে থার্ড পার্টির মাধ্যমে বিভিন্ন বাল্ক এসএমএস, সরকারি তথ্য, ইমার্জেন্সি ব্যালান্স সংক্রান্ত নোটিফিকেশন, থার্ড পার্টি-সিপি টিভাস সংক্রান্ত, ইউটিলিটি বিল পে, ওয়ালেট সার্ভিস, পুরস্কার বার্তা, ব্যালান্স ট্রান্সফার, ভয়েস মেইল, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি সংক্রান্ত এসএমএস।
দেশের ৪টি মোবাইল অপারেটর তাদের গ্রাহকদের দিনে প্রায় ১৫২ কোটি প্রমোশনাল এসএমএস পাঠায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের এবং সবচেয়ে কম এসএমএস পাঠায় টেলিটক।
বিটিআরসি জানিয়েছে, এসব এসএমএসের বেশির ভাগই এখন দেয়া হয় বাংলায়। বাংলায় এসএমএস দিতে অপারেটরদের অনেক আগেই নির্দেশনা দিয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি মাসে অপারেটররা গ্রাহকদের যে পরিমাণ এসএমএস দিয়েছে তার ৮৭ শতাংশই বাংলা।
এমনকি গ্রাহকদের বিরক্তিকর এসএমএস কমাতে উদ্যোগী হয়ে প্রমোশনাল এসএমএস বন্ধ করার সেবাও চালুর নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকদের সচেতন করতেও কাজ করে সংস্থাটি। বিটিআরসি ২০১৮ সালে রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত গ্রাহকদের যেন কোনো এসএমএস না দেয়। এ বিষয়ে অপারেটরদের নির্দেশনাও দেয়।
দুর্বল নেটওয়ার্ক, কল ড্রপ, বিরক্তিকর এসএমএস, ইন্টারনেট প্যাকেজ বিড়ম্বনা, কল সেন্টারের গ্রাহক সেবা পেতে ভোগান্তিসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রামীণফোনের (জিপি) গ্রাহকরা।
জিপির কল ড্রপ যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি কিছু সার্ভিসে প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছেন তারা। এর একটি হচ্ছে সময়ে-অসময়ে পাঠানো অপারেটরটির প্রচারণামূলক এসএমএস। সারাদিন তো আছেই, এমনকি গভীর রাতেও তাদের মোবাইলে এসব এসএমএস আসছে বলে অভিযোগ করছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
কল ড্রপ বা বিরক্তিকর এসএমএসের বাইরে ইন্টারনেট নিয়েও গ্রাহকদের রয়েছে নানান অভিযোগ। প্যাকেজ থাকার পরও সরাসরি টাকা কেটে নেয়া, ঠিকমতো সংযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তাদের। এসব ব্যাপারে গ্রাহকদের অভিযোগের কোনো সুরাহাও হচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলেন, ফোর-জি চালুর পর নেটওয়ার্কব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কথা বললেও দিনদিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেই সাথে কলড্রপের পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে থাকার শর্ত থাকলেও অপারেটররা তা মানছে না। কোনো ক্ষতিপূরণও প্রদান করছে না। প্রমোশনাল ম্যাসেজের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে গ্রাহকরা মেসেজের যন্ত্রণায় ত্যক্তবিরক্ত। এমনকি গভীর রাতে মেসেজ আসার ফলে অনেক হৃদরোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আমরা মনে করি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতার ফলেই অপারেটররা গ্রাহকদেরকে ভোগাতে সাহস পাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৭
আপনার মতামত জানানঃ