ফেসবুক কি আর মানুষকে সেভাবে টানতে পারছে না? ফেসবুক কি দিন দিন আকর্ষণহীন হয়ে পড়ছে? এইসব প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে আলোচনায়। গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ফেসবুকে সক্রিয়তা অনেক কমে গেছে। এখন সেখানে শুধু ব্র্যান্ড আর চটকদার খবর। বন্ধু-পরিবারের মধ্যে যোগাযোগের যে আকর্ষণ, তা আর নেই। যে অ্যাক্টিভিজমের উপর ভিত্তি করে ফেসবুকের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, সেটি এখন আর নেই। ফেসবুকের আগের জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
ফেসবুক সব সময়ই একটি বর্ধনশীল প্ল্যাটফর্ম। এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারপরও গত কয়েক বছরে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়েনি ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। মূলত বিশ্বের অন্যান্য অংশের ব্যবহারকারীরাই এই প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেসবুক আগের মতো জনপ্রিয় নেই। তরুণ প্রজন্ম ফেসবুকের চেয়ে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের দিকে বেশি ঝুঁকছে।
ইউরোপে ‘বাধ্য হয়ে’ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করতে পারে মেটা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন এক আইন অনুযায়ী, যে সব কোম্পানি ইইউ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে ও সে সব তথ্য জমা রেখে প্রসেস করে তা ইউরোপিয়ান সার্ভারেই রাখতে হবে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান দুটি সার্ভারেই তথ্য প্রসেস করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপনের জন্য এটি জরুরি।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে মেটা বলছে, কোম্পানিটি ইইউ’র নতুন নীতিমালার অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে তারা ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ফেসবুক্ ও ইনস্টাগ্রামের সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেবে।
মেটার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলছেন, ইইউভুক্ত অনেক দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইইউর এ আইনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য পরিষেবা নিয়ে থাকে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফেসবুক দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হারানোয় মেটার শেয়ার দরে ২৫ শতাংশ ধস নামে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফেসবুক দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হারানোয় মেটার শেয়ার দরে ২৫ শতাংশ ধস নামে।
অবস্থাদৃষ্টে এমনটাই মনে হচ্ছে কোম্পানিটি নিজেদের সামনে আসা বাধা নিয়ে কাজ করার চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দাপট কমেছে ফেসবুকের
ফেসবুকের ১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দৈনিক সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ ত্রৈমাসিকে ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৯২ কোটি ৯০ লাখ। আগের ত্রৈমাসিকে এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ কোটি।
ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মসের শেয়ারের দাম গত বুধবার দিনের শেষে ২০ শতাংশের চেয়েও বেশি কমে গেছে। অ্যাপলের ডিভাইসে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নীতিতে পরিবর্তন ও টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল পূর্বাভাষ প্রকাশ করে মেটা। এর পরই মূলত শেয়ারের দাম কমে যায়।
সম্প্রতি মার্ক জুকারবার্গ তার কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন মেটা। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এটি জানায়, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। কারণ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যা শুরু থেকেই তাদের বড় বাজার হিসেবে বিবেচিত। তাছাড়া অন্যান্য অঞ্চলেও এটির ব্যবহারকারী কমেছে।
মেটা জানিয়েছে, অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার শর্ত পরিবর্তনের কারণে তারা সমস্যায় পড়েছে। এতে করে, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে ও এ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে জটিলতার মুখে পড়ছে। এছাড়াও মেটা সাপ্লাই চেইনে বিঘ্নসহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়ের উল্লেখ করেছে।
মেটা আরও জানায়, তারা টিকটক ও ইউটিউবের কাছ থেকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এখন ছোট ছোট ভিডিও ‘রিলের’ দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন, কিন্তু সেগুলো থেকে আয়ের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণে সার্বিকভাবে আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীদের ফেসবুকের প্রতি অনীহার অন্য কারণও রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ফেসবুকের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠানের নাম বদল।
মূলত মেটাভার্সকে ফোকাস করতে ফেসবুকের প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে মেটা রাখা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মেটাভার্স নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। এই মুহূর্তে মেটাভার্স একটি অবাস্তব বিষয় হিসেবেই রয়ে গেছে।
পাশাপাশি মেটার প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ডেভ ওয়েনার একটি কনফারেন্স কলে বিশ্লেষকদের জানান, অ্যাপলের গোপনীয়তা শর্ত পরিবর্তনের প্রভাব পুরো ২০২২ জুড়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য হতে পারে।
মেটা জানিয়েছে, অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার শর্ত পরিবর্তনের কারণে তারা সমস্যায় পড়েছে। এতে করে, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে ও এ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে জটিলতার মুখে পড়ছে। এছাড়াও মেটা সাপ্লাই চেইনে বিঘ্নসহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়ের উল্লেখ করেছে।
মেটা আরও জানায়, তারা টিকটক ও ইউটিউবের কাছ থেকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এখন ছোট ছোট ভিডিও ‘রিলের’ দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন, কিন্তু সেগুলো থেকে আয়ের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণে সার্বিকভাবে আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বিশ্লেষক ডেব্রা আহো উইলিয়ামসন জানান, নিশ্চিতভাবেই মেটার জন্য সামনে আরও বড় বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, বিশেষ করে বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া রাজস্বের ক্ষেত্রে।
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, টিকটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে, জানান ডেব্রা।
সূত্র মতে, ফেসবুকে বয়স্ক ব্যবহারকারী বাড়ছে ঠিকই কিন্তু তরুণ ব্যবহারকারীরা স্ন্যাপচ্যাটের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ইমার্কেটার নামে একটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্রিটিশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের বয়স ১২ ও ২৪ বছরের মাঝামাঝি তাদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমতে পারে সাত লাখের মতো। এতে কোম্পানিটির যুক্তরাজ্যের বাজারে মার্কেট শেয়ার কমে দাঁড়াবে ৭১ শতাংশ।
ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর ৪৩ শতাংশ ব্রিটিশ কিশোর তরুণ স্ন্যাপচ্যাটে স্থানান্তরিত হতে পারে। সংখ্যাটি ২০১৫ সালের স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারীদের তুলনায় দ্বিগুন।
এই পরিসংখ্যানটি একইভাবে খাটে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও, যেখানে মাসে অন্তত একবার ফেসবুক লগইন করা ব্যবহারকারী প্রথমবারের মতো ৫০ শতাংশের কমে নেমে এসেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৬
আপনার মতামত জানানঃ