সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে মেক্সিকো। যেখানে সাংবাদিকদের নিরাপদ সাংবাদিকতার সুযোগ একদম তলানিতে। দেশটিতে প্রায়ই সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে। দেশটিতে আবারও সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মেক্সিকোতে চার সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সবশেষ হত্যার শিকার সাংবাদিক রবার্তো টলেডো মেক্সিকোর মিয়াচেন রাজ্যের একটি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা হত্যাকাণ্ড এরই মধ্যে দেশটিতে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে এমন সংগঠনগুলো সরকারকে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
টলেডোসহ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নিহতদের মধ্যে দুইজন সাংবাদিকদের জন্য ফেডারেল সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অন্যজন যোগদান করতে চেয়েছিলেন বলে জানায় অধিকার গোষ্ঠী।
মনিটর মিচোয়াকানের পরিচালক আরমান্দো লিনারেস সোমবার টলেডোর হত্যার পরে বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন, কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে তথ্য উন্মোচন করার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
মিচোয়াকান অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, টলেডো তার ক্ষত থেকে মারা গেছেন। রাজ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা হত্যার তদন্ত করছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তারা।
অন্যদিকে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ফটোগ্রাফার মার্গারিটো মার্টিনেজ ও ২৩ জানুয়ারি রিপোর্টার লর্ডেস মালডোনাডো লোপেজকে সীমান্ত শহর টিজুয়ানায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তাছাড়া প্রতিবেদক হোসে লুইস গাম্বোয়াও উপকূলীয় রাজ্য ভেরাক্রুজে ১০ জানুয়ারি একটি হামলায় নিহত হন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা হত্যাকাণ্ড এরই মধ্যে দেশটিতে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে এমন সংগঠনগুলো সরকারকে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০০০ সালের পর মেক্সিকোতে শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। দেশটির মাদককারবারীরা প্রায়ই সাংবাদিকদের হত্যা করে। সাংবাদিকরা খবর প্রকাশ করতে যেন ভয় পায় সে জন্যই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটায় অপরাধীরা। ২০২২ সাল দেশটিতে সাংবাদিকদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফি ডিলোরি জানান, ‘বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা বেড়েছে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে সাংবাদিকরা কেবল তাদের পেশাগত ঝুঁকির শিকার। কিন্তু দেখা গেছে, সংবেদনশীল বিষয়গুলো অনুসন্ধান বা রিপোর্ট করতে গিয়েই সাংবাদিকরা দিন দিন লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। যে কারণে তাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে অর্থাৎ রিপোর্ট করা, জনগণকে জানানো- এই অধিকার তাদের আছে, এটা সবারই অধিকার।’
অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া, অপহরণ, নির্যাতন, ডিজিটাল ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজব রটানোসহ নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদের। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনলাইন সহিংসতার মাত্রা বেশি বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাংবাদিকরা আরও অগুনিত হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেমন—অপহরণ, নির্যাতন ও গুম থেকে শুরু করে গুজব রটানো ও হয়রানি, বিশেষত ডিজিটাল মাধ্যমে, অনেক ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নারী সাংবাদিকরা বিশেষত অনলাইন সহিংসতার ঝুঁকিতে বেশি।
তিনি বলেন, সমাজের ওপর সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কারণ তারা তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল তথ্যের ছায়া মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সত্যিকার অর্থেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তথ্যপ্রাপ্তি যখন হুমকিতে পড়ে, তখন তা এমন বার্তা পাঠায়, যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনও রাষ্ট্র যদি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করে, তবে সেখানে গণমাধ্যমের একশভাগ স্বাধীনতা থাকতেই হবে। যে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার সেই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণের কথাই উঠে আসে গণমাধ্যমে। তাই এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৮
আপনার মতামত জানানঃ