করোনায় সাধারণ মানুষের জন্য আরেক দফা আপদ হয়ে এসেছে বাজারের চালের বাড়তি দাম। আমন মৌসুমে নতুন ধান বাজারে উঠেছে। বাড়ছে চালের সরবরাহও। এর পরেও গত চার দিনে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। সরকার নির্ধারিত চালের দাম মিল থেকে খুচরা পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই ব্যবসায়ীরা মানছেন না। উল্টো তারা অজুহাত তুলছেন যে, ধানের দাম বেড়ে গেছে। তাই চালের দামও বাড়ছে। এজন্য ক্রেতারা দায়ী করছে সিন্ডিকেটকে।
এদিকে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, আগে কেনা বোরো ধানে উৎপাদন হচ্ছে মিনিকেট চাল। এই চাল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হওয়া উচিত। পাশাপাশি আমন চালের সরবরাহ বাড়ছে। এতে চালের দাম কমা উচিত। এগুলো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ছাড়া আর কিছু নয়।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর ২০২০) রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাড়তি দামে চাল বেচাকেনা হচ্ছে। মগ বাজারের খুচরা দোকানি হাবিব উল্লা বলেন, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট ২ হাজার ৮৫০ টাকা করে পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে। এই চাল তিনি কেজিতে ৩ টাকা লাভে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যান্য বাজারে দেখা যায়, খুচরায় মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চাল বিআর আটাশ, লতা ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং মোটা চালের কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।
এদিকে বাজারে এখন আমন মৌসুমের ধান বেচাকেনা হচ্ছে। সরকারও ২৬ টাকা কেজিতে অন্য বছরের মতো ধান কেনা শুরু করেছে। সরকার নির্ধারিত এই দর অনুযায়ী প্রতি মণের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোতে এখন প্রতি মণ আমন ধান ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে যে দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে তা যৌক্তিক বলে মনে করছেন কৃষকরা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। যদিও ধানের দাম বেশি বলছে মিলগুলো। সরকার হিসাব করে দাম ঠিক করেছে। এখন চালের দাম বাড়ার যৌক্তিকতা নেই। গত বছরের চেয়ে এবার সরকারের গুদামে চাল মজুদ কম। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছেন মিল মালিকরা। তিনি আরো বলেন, এখন চালের বাজার কয়েকজন মিল মালিকের ওপর নির্ভর করছে। যখন সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দুর্বল হয়, তখনই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। তবে সরকার চাল আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই আমদানি আরও বাড়ানো উচিত। ভোক্তারা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। যেসব মিল মালিক দিনের পর দিন সুযোগ নিয়ে বাজার অস্থির করছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বার বার তালিকা হয় এবং তারা পার পেয়ে যান। এমন হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।
কারওয়ান বাজারের হাজী রাইস এজেন্সির পাইকারি ব্যবসায়ী মাইনুদ্দিন মানিক বলেন, গত চার দিন ধরে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে মিলে চালের দাম বাড়িয়েছেন মালিকরা। মিলগেটে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এখন মোজাম্মেল, রশিদসহ ভালো মানের চাল মিলগেটে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই চাল বাজারে এলে দাম আরও বাড়বে। তিনি বলেন, মিলগেটে সরকার নির্ধারিত দর মিনিকেট ২ হাজার ৫৭৫ টাকা ও মাঝারি চাল ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এই দর মিল মালিকরা মানছেন না। এ কারণে বাজারে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল মিনিকেট ৫০ থেকে ৫৩ টাকা, মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা ও মোটা ৪০ থেকে ৪২ টাকা যৌক্তিক মূল্য। আর খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, মাঝারি ৪৯ থেকে ৫০ টাকা ও মোটা ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত।
কিন্তু নির্ধারিত দরে কিংবা যৌক্তিক দর কিছুই মানছেন না মিল মালিকরা। রাজধানীর চালের বাজারে মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এখন বাজারে আসা এই চালের ধান অনেক আগেই কেনা। এই চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই। বরং এখন পর্যাপ্ত নতুন ধান-চাল বাজারে আসা শুরু হয়েছে। এতে দাম কমা উচিত।
মিই/নসদ/০৩১০
আপনার মতামত জানানঃ