ইয়েমেন সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই; জাতিসংঘের এই কথাকে পাত্তা না দিয়েই প্রায় সাত বছর ধরে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে। মারা যাচ্ছে অগণিত মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে শত শত মসজিদ। শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ বেছে নেওয়ার জন্য যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে বারবারই আহ্বান জানিয়েও সাড়া মেলেনি। ইয়েমেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতিই হতে দেখা গেছে শুধু। বেড়েছে মানুষের দুর্দশা।
গত রোববারও সৌদি জোটের বিমান সানা প্রদেশের মা’ইন এলাকায় হামলা চালালে তিনজন নিহত হন। ইয়েমেনের আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আল-মাসিরা এই খবর দিয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলীয় সাবওয়াহ প্রদেশের বিহান এলাকার একটি গ্যাস স্টেশনে সৌদি জোটের বিমান হামলায় বাকি দুজন নিহত হন।
শত শত মসজিদ ধ্বংস
সৌদি জোটের বর্বরতা সম্পর্কে ইয়েমেনের ওয়াকফ সংস্থা জানিয়েছে, এই পর্যন্ত আরব জোট ইয়েমেনের শত শত মসজিদ ধ্বংস করেছে। সংস্থাটি বলছে, ইয়েমেনের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের মধ্যদিয়ে ইয়েমেনের জনগণের প্রতি সৌদি জোটের প্রচণ্ড ঘৃণার বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, চার বছরে সৌদি জোটের আগ্রাসনে ইয়েমেনের ১০২৪টি মসজিদ আংশিক ও পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
বিধস্ত এসব মসজিদে কোরআন শরীফের অসংখ্য কপি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ মসজিদগুলোর মধ্যে অনেক প্রাচীন ও ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানও রয়েছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে ২৭তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে আনসারুল্লাহ আন্দোলনের পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা আদনান ক্বাফলা এসব কথা বলেন। ইরানের ইয়ং জার্নালিস্ট ক্লাবের ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সৌদি জোটের চালানো এসব হামলাকে ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ আখ্যায়িত করে আদনান ক্বাফলা বলেন, সৌদির হামলায় ধ্বংস হওয়া অনেক মসজিদ বিভিন্ন সাহাবা ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেন মানবিক দুর্যোগের শিকার হয়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন এই আগ্রাসী ও বলদর্পী শক্তির বর্বরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইয়েমেনের ওয়াকফ সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরব এবং তার আঞ্চলিক কয়েকটি আরব মিত্র দারিদ্র্যপীড়িত ইয়েমেনের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে।
ইয়েমেনের সাবেক পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল এবং ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের যোদ্ধাদের নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে সৌদি আরব এই আগ্রাসন চালায়।
তবে আজ পর্যন্ত তারা কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি বরং তারা ইয়েমেনে এক রকমের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে।
সৌদি কি ইসলামের জন্য ক্ষতিকর?
প্রথমত মনে রাখতে হবে, সৌদি আরব কোনো ইসলামি রাষ্ট্র নয়। মুহাম্মদ বিন সৌদ নামের এক ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র মাত্র। যারা জবরদস্তিমূলক নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মভূমিকে দখল করে রেখেছে।
হাদিসে যে রাষ্ট্রকে ‘জাজিরাতুল আরব’ বলা হতো, সেই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে নিজেদের পৈত্রিক সম্পদে পরিণত করেছে এই সৌদ রাজবংশ।
এরা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ইসলামের ইতিহাসের সর্বশেষ খেলাফত ব্যবস্থা ‘উসমানি খেলাফত’-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
ক্ষমতার লোভে উসমানি খেলাফতের বিরুদ্ধে বৃটিশদের সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়। অবশেষে বৃটিশ অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সহায়তায় খেলাফতে উসমানিয়ার বিরুদ্ধে তথাকথিত বিজয় অর্জন করে ‘সৌদ’ রাজ পরিবার শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে।
এর মানে অত্যন্ত পরিষ্কার, এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে মুসলমানদের রক্তের ওপর। প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইসলামি খেলাফতের বিরুদ্ধে। সুতরাং এ পরিবারের শাসন থেকে ইসলামের কোনো মৌলিক উপকার, সেবা আশা করাটা যথার্থ হবে বলে মনে করি না।
মুসলিম উম্মাহের উপকারে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কোনো প্রকার কার্যকরী পদক্ষেপ এ পরিবার থেকে পরিলক্ষিত হয়নি। বরং ইঙ্গ-মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষা করতে মুসলমানদের মাঝে বিবাদ উসকে দেওয়া এবং সেই সুযোগের নিজেদের প্রভাব সৃষ্টি করাই তাদের মূল কূটনীতি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ