মিশরে একজন লেখককে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৮০ বছর বয়সী আহমেদ আবদু মাহের সে দেশের নামকরা আইনজীবী এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক ১৪টি বইয়ের লেখক। ইসলামের বিজয় নিয়ে বিতর্কিত কথা বলার দায়ে তাকে এ কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ইসলাম অবমাননা, সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানোর দায়ে।
সপ্তম এবং অষ্টম শতাব্দীর আরব বিজয় সম্পর্কে মাহের যে ধারণা দিয়েছেন, সেটাই তার প্রধান অপরাধ।
সাজাপ্রাপ্ত লেখক আহমেদ আবদু মাহের মনে করেন, ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ফলে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের লালসা কমেছে। তবে, ইসলাম প্রচারকরা আরও বেশি উন্নত সমাজকে উৎখাত ও প্রতিস্থাপন করেছিল।
আহমেদ আবদু মাহের তার অনেক বক্তৃতা, লেখা এবং টেলিভিশনে আলাপচারিতায়ও বিতর্কিত দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামের প্রাথমিক বিজয়গুলো ছিল সামরিক আক্রমণ। মিশরের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক প্রতিষ্ঠান আল-আজহারকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবীদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মাহের মনে করেন, মুসলিমদের ওই সব যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল ইসলাম প্রচারের পরিবর্তে নারীদের দাস বানানো।
মুসলিমদের ওই সব যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল ইসলাম প্রচারের পরিবর্তে নারীদের দাস বানানো।
মিশরের সরকারের বিরুদ্ধে বরাবরই মানবতাবিরোধী ও বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, বাকস্বাধীনতা খর্ব করতে মিশর সরকার অব্যাহতভাবে বলপ্রয়োগ করে যাচ্ছে। এই বলপ্রয়োগের কারণে সরকার সমালোচকদের জন্য পুরো মিশর উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে।
অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রচারণা পরিচালক নাজিয়া বউনাইম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন মিশরে সরকারের সমালোচনা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক।’
তিনি বলেন, ‘মিশরীয়রা শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশ করতে চাইলে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’
অ্যামনেস্টি বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী নির্মমভাবে স্বাধীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জায়গাগুলোতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বে ২০২০ সালে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার চারটিই মধ্যপ্রাচ্যে।
এই মানবাধিকার সংস্থা তাদের প্রকাশ করা এক রিপোর্টে বলছে, গত বছর গোটা বিশ্বে যে ৪৮৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তার ৮৮ শতাংশই হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ—ইরান, মিশর, ইরাক এবং সৌদি আরবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সার্বিকভাবে কার্যকর করা মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ২০১৯ সালের ৫৭৯ হতে ২০২০ সালে ৪৩০ এ নেমে এসেছে। গত বছর মূলত সৌদি আরব এবং ইরাকে সরকারি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা কমে যাওয়ার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে এই সংখ্যা কমেছে বলে মনে করা হয়।
তবে অ্যামনেস্টির রিপোর্ট বলছে, একদিকে যখন দুটি দেশে এই সংখ্যা কমেছে, তখন আবার মিশরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার বেড়ে গেছে ৩০০ শতাংশ। গত বছর মিশর ১০৭ জনের দণ্ড কার্যকর করেছে। দেশটি সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে।
যাদের এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাদের ২৩ জনের সাজা হয়েছিল রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে। অ্যামনেস্টি বলছে, জোর করে আদায় করা স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এদের অন্যায্য বিচারের মাধ্যমে এই দণ্ড দেয়া হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে মিশরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার বেড়ে যায়, ৫৭ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়। মিশরের আল-আকরাব কারাগার থেকে বন্দী পালানোর এক ব্যর্থ চেষ্টার সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন বন্দী নিহত হয়। তারপর এই ঘটনা ঘটেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪২
আপনার মতামত জানানঃ