চারিদিকে পাহাড়। গহীন বন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায় এ পাহাড়ি জঙ্গল। গোপনে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল স্নো লেপার্ড পরিসংখ্যানের জন্য। কিন্তু সেই লুকোনো ক্যামেরা এমন ছবি দিল যার জন্য কোনও বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞও তৈরি ছিলেননা। সেই লুকোনো ক্যামেরায় ধরা পড়লো তাকিন নামে বিশ্বের বিরল এক প্রজাতি। বলা হচ্ছে, বিশ্বর বিরল স্তন্যপায়ীপ্রাণীদের একটি হলো এই তাকিন।
বন বিভাগের অনেক কর্মকর্তা এটা দেখেই হতবাক যে এ প্রাণি ভারতের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে! অথচ কারও জানা নেই! ভারতের অরুণাচল প্রদেশের একটা বড় অংশই ঘন জঙ্গলে ঘেরা। অগুন্তি পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা অধিকাংশ জায়গায় মানুষের বাস নেই। সেখানে অনেক জায়গায় মানুষ যানই না। যেতে পারাই এক কঠিন কাজ।
অরুণাচলের পূর্ব কামেং জেলার সেপ্পা জঙ্গল এমনই দুর্গম গহন জঙ্গল। সেখানে মানুষের যাতায়াত নেই। সেখানেই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বিশ্বের অন্যতম বিরল এক প্রাণি। যা লাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তা অতিবিরলের তালিকায় পড়ে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তাকিন মূলত ছাগল প্রজাতির প্রাণী। এই প্রাণী এতই বিরল যে এটা লাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তা অতিবিরলের তালিকায় পড়ে।
ওই জঙ্গলে যে এই প্রাণীর অস্তিত্ব আছে সেটাই জানা ছিল না কারোর। যে এলাকাতে এই তাকিনের খোঁজ মিলেছে সেই জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিটার উঁচুতে।
সেপ্পা নামের বনের যে অংশে দেখা গেছে তাকিনটিকে সে অংশটা পাহাড়ে ঘেরা। এ অংশটা এতটাই দুর্গম যে সাধারণত মানুষ সেখানে যায় না।
ওই এলাকার বিভাগীয় এক বন কর্মকর্তা বলছেন, আমরা জানি এশিয়ার, বিশেষ করে হিমালয়ের পাহাড়ি এলাকাতে তাকিন ছিল। এত দিন তা দেখাই যায়নি। কারণ জঙ্গল নষ্ট করা এবং নির্বিচারে হত্যা করার কারণেই এই প্রাণীটির অস্তিত্ব দেখা যায়নি। আমরা খুবই আনন্দিত যে এই প্রাণীকে দেখা গেছে এই এলাকাতেই।
তাকিন মূলত ছাগল প্রজাতির প্রাণী। এই প্রাণী এতই বিরল যে এটা লাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তা অতিবিরলের তালিকায় পড়ে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ওই পাহাড়ি জঙ্গলে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল স্নো লেপার্ড কত আছে সেটা দেখার জন্য। কারণ কিছুদিন আগেই অরুণাচলপ্রদেশে পাওয়া গিয়েছে আরেকটি বিরল প্রাণী স্নো লেপার্ডের উপস্থিতির প্রমাণ। ওই এলাকাতে ওই প্রাণী আরও আছে বলেও মনে করছেন তারা। তাই স্নো লেপার্ডের খোঁজ পেতেই সেখানে গত মাসেই ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু সেই ক্যামেরাতে এমন প্রাণীর ছবি পাওয়া গেল যেটার জন্য কোনও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরাও তৈরি ছিলেন না।
জানা যায়, তাকিন একটি ক্যাপ্রিনি উপপরিবারের বৃহৎ প্রজাতির ছাগল-জাতীয় প্রাণী, যাদের প্রধানত দেখা মেলে পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে। এদের চারটি উপ-প্রজাতি হলো মিশমি তাকিন, সোনালী তাকিন, তিব্বতি বা সিচুয়ান তাকিন, এবং ভুটানী তাকিন । তাকিন ভুটানের জাতীয় পশু।
সমুদ্রতল থেকে ১,০০০ এবং ৪,৫০০ মি (৩,৩০০ এবং ১৪,৮০০ ফু) এর উচ্চতার মধ্যে বনভূমি উপত্যকা থেকে পাথুরে, ঘাস দিয়ে আবৃত আলপাইন অঞ্চলে তাকিন পাওয়া যায়। মিশমি তাকিন পূর্ব অরুণাচল প্রদেশে দেখা যায়, আর ভুটানী তাকিন পশ্চিম অরুণাচল প্রদেশ এবং ভুটানে রয়েছে। ভারতের অরুণাচল প্রদেশের দিহং-দিবাং বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ মিশমি, উত্তর সিয়াং (কোপু)[৫] এবং ভুটানী তাকিনের উভয়েরই একটি শক্তিশালী কেন্দ্র।
উত্তর আমেরিকার ওহাইওর কম্বারল্যান্ডে বুনো তাকিনের একটি সক্রিয় প্রজননশীল দল বিচরণ করে। তারা চিড়িয়াখানা ও অ্যাকুরিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে গঠিত একটি স্পেসিস সারভাইভাল প্ল্যান (এসএসপি) এর অংশ। আমেরিকার মিনেসোটা চিড়িয়াখানায় বন্দি অবস্থায়ও কিছু রয়েছে। সান দিয়েগো চিড়িয়াখানা, দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস চিড়িয়াখানা, নর্থ ডাকোটাতে রেড রিভার চিড়িয়াখানা, মন্টানার জুমন্টানায়, রোড আইল্যান্ডের রজার উইলিয়ামস পার্ক চিড়িয়াখানা এবং কানাডার অন্টারিওর পিটারবারোতে রিভারভিউ পার্ক ও চিড়িয়াখানায় প্রদর্শনের জন্য রয়েছে কিছু তাকিন।
মূলত অতিরিক্ত পরিমাণে শিকার ও তাদের প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংসের কারণে, তাকিনকে চীনে বিপন্ন এবং আইইউসিএন এর তালিকায় বিপদগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও তাকিন প্রাকৃতিকভাবে একটি সাধারণ প্রজাতি নয়, তবে তাদের সংখ্যা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে বলে মনে হয়। মায়ানমারে অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসায় তাকিনের শিং রয়েছে এবং ১৯৯৯-২০০৬ সাল থেকে তাচিলিক বাজারে তিনটি সমীক্ষায় মোট ৮৯ টি শিং প্রকাশ্যে বিক্রির জন্য পাওয়া গিয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৭
আপনার মতামত জানানঃ