চীন-ভুটান সীমান্ত এলাকায় ভুটানের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে চীন। শুধু অনুপ্রবেশই নয়, ভূমি দখল করে গত এক বছরে চারটি গ্রামও তৈরি করেছে বেইজিং। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত নতুন ছবিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত এক বছর ধরে ভারত-ভুটান-চীন সীমান্ত লাগোয়া ডোকলামের কাছে ভুটানের ভূখণ্ড দখল করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে বেইজিং।
সূত্র মতে, সীমান্ত লাগোয়া ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গত এক বছরের মধ্যে চারটি গ্রাম গড়ে তুলেছে শি জিনপিংয়ের দেশ। ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স ডিট্রেসফা সম্প্রতি একটি উপগ্রহ চিত্র টুইট করে এই তথ্য সামনে এনেছে।
এদিকে, ভুটানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ভারত সরকার নিজেদের দায়বদ্ধ মনে করে বলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নয়া দিল্লি। ২০১৭ সালে এই ডোকলাম নিয়েই ভারত-চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চীন-ভুটানের বিতর্কিত ভূখণ্ডে বেইজিংয়ের এই জবরদখল ভারতের পক্ষে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে দেশটির বিশ্লেষকরা। যদিও ৪টি নতুন গ্রাম তৈরির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সামরিক উন্নয়নবিষয়ক প্রখ্যাত স্যাটেলাইট ছবি বিশেষজ্ঞ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন।
ছবিযুক্ত পোস্টটিতে বলা হয়, গত এক বছরে ভুটান সীমান্তের ভেতরে একাধিক চীনা গ্রাম ও বসতি নির্মাণের বিষয়টি স্পষ্ট। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গ্রামগুলোর অবস্থান।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের প্রকাশ করা ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে আরও জানা যায়, ভুটান সীমান্তের ভেতরে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত এসব গ্রাম।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ভুটানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। সেই সমস্যা মেটাতে ভুটানের ওপর চীন ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে। এবার সরাসরি ভূটানের ভূখণ্ডে গ্রাম তৈরি করায় চীন এবং ভারত সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে উপগ্রহ চিত্রে চারটি গ্রাম ধরা পড়লেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডোকলামে চারের অধিক গ্রাম তৈরি করেছে চীন। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় চীনের কেন্দ্রীয় সরকার বহুসংখ্যক সেনা মোতায়েনও করেছে।
ভুটানের যে এলাকায় চীন নির্মাণকাজ করছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই এলাকাকে ‘চিকেনস নেক’ বলা হয়। এই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। ফলে উপগ্রহ চিত্রে যে দৃশ্য ধরা পড়েছে তা নয়াদিল্লির উদ্বেগ অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডোকলামের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব মূলত চীন ও ভুটানের। ভারত অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ দাবি না করলেও এ বিষয়ে ভুটানের প্রতি সমর্থন দেশটির। ডোকলামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সীমিত উপস্থিতিও রয়েছে।
চীন-ভারত সামরিক উত্তেজনার পর থেকে চার বছর আগে ডোকলামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে চীন। বিতর্কিত ভূখণ্ডে জারি রেখেছে সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত নয়া দিল্লি-বেইজিং কূটনীতিও।
এর মধ্যে ভুটানের মাটিতে চীনের নতুন নির্মাণকাজ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ভারত সরকারের। ভুটানের পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কবিষয়ক নীতি নিয়ে পরামর্শ ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ভারতের।
স্থল সীমান্ত পুনর্নির্ধারণে নতুন করে আলোচনায় বসার জন্য ভুটান সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছে চীন। যদিও চীন-ভুটান সীমান্ত নির্ধারণে সত্যিকার অর্থে স্পষ্ট কোনো চুক্তি কোনো দিনই চূড়ান্ত ছিল না।
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একটি উপগ্রহ চিত্রে ডোকলাম এলাকায় চীনের একটি রাস্তা তৈরির তথ্য উঠে আসে। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা ভারতের সিকিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। চীনের এই কাজে সে সময় ফের বিতর্ক শুরু হয়।
এর কিছু দিন আগে চীনের এক সংবাদমাধ্যমের কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে দাবি করেছিলেন, ভুটান লাগোয়া চীন সীমান্তে নতুন গ্রাম তৈরি করে ফেলেছে শি জিনপিংয়ের সরকার। বিষয়টি নিয়ে সে সময় উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল ভারত।
পরে দেখা যায়, সীমান্তে নয়, ভুটানের প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীন। সেখানেই তৈরি হয়েছে ওই নতুন গ্রাম। আর এবার হয়তো সেই গ্রামের ছবিই নতুন করে সামনে এলো।
উল্লেখ্য, ডোকলাম ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। ডোকলাম মালভূমি মূলত ভুটানের অংশ হলেও, তা ভারতের সিকিম রাজ্যের ঠিক পাশেই অবস্থিত।
এমনিতেই ভুটানের নিরাপত্তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী কাজ করে থাকে। ভুটানে নয়াদিল্লির সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। ফলে ডোকলাম নিয়ে ভারত সব সময়ই সতর্ক।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ