চলতি বছরের শুরুর দিকে, তেহরিক-ই-লবাইক (টিএলপি) নামে একটি কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠনকে জঙ্গি তকমা দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। সে সময় সংগঠনের প্রধান সাদ রাজভি-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল হাজার দু’য়েক সদস্যকে।
সেই টিএলপি-কেই এ বার দেশটর নির্বাচনে অংশগ্রহণের টিকিট দিতে চলেছে ইমরান খানের সরকার। পাশাপাশি তুলে নেওয়া হচ্ছে তাদের জঙ্গি তকমাও। সংশিষ্টদের মন্তব্য, নামে গণতন্ত্র হলেও পাকিস্তানের ক্ষমতা আসলে রয়েছে সেনা ও মৌলবাদীদের হাতে। এবার শান্তিচুক্তির নামে জেহাদি সংগঠন ‘তেহরিক-ই-লাবাইক’-কে ভোটে লড়ার অনুমতি দিয়ে আবারও সেটা প্রমাণ করল ইসলামাবাদ।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তানে নিযুক্ত ফরাসি দূতের বহিষ্কার চেয়ে সরব হয় টিএলপি। তারা অভিযোগ করে, একটি ফরাসি ব্যঙ্গচিত্র পত্রিকায় তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। সে সময় লাহৌর-ইসলামাবাদ জাতীয় সড়কে তাদের তাণ্ডবে মৃত্যু হয় সাত জন পুলিশ অফিসারের। এছাড়া আহত হন শতাধিক।
এর পরেই টিএলপি-কে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্ত তারা বদলাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনেও অংশগ্রহণের পথও খুলে দেয়া হচ্ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির জন্য।
সূত্র মতে, এ নিয়ে পাক সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টিএলপি নেতৃত্বের খুব সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। পঞ্জাব প্রদেশের আইনমন্ত্রী রাজা বাশারত জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই টিএলপি-র হাজারখানেক সদস্যসহ রাজভিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বাকি প্রায় ১৩০০ জনকেও মুক্তি দেওয়া হবে। শোনা যাচ্ছে, তাদের জঙ্গি আখ্যা তিলে নেয়া হলে, তারাও আর ফরাসি দূতের বহিষ্কার চাইবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টিএলপি।
টিএলপির সাথে চুক্তি
এর আগে সহিংস সংঘাতের অবসান ঘটাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বায়িক পাকিস্তান (টিএলপি) পার্টির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছায় দেশটির সরকার। এর মধ্য দিয়ে টিএলপির দশ দিনের বিক্ষোভের অবসানও হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এবং ধর্ম বিষয়কমন্ত্রী মুফতি মুনিবুর রেহমান এই চুক্তির জন্য হওয়া বৈঠকে অংশ নেন।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, চুক্তির শর্ত মাফিক কট্টরপন্থী ধর্মীয় সংগঠন টিএলপি-র প্রধান সাদ রাজভি-সহ গ্রেপ্তার করা হাজার দু’য়েক সদস্যকে মুক্তি দিতে চলেছে ইসলামাবাদ।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান সরকারের এই নমনীয়তার জন্যই ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে সংগঠনটি। আর সেই ধাক্কা সামলাতে হবে ইসলামাবাদকে।
যেভাবে উত্থান টিএলপির
প্রসঙ্গত, গত বছরের ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভের সময় গ্রেফতার হন টিএলপি নেতা সাদ রিজভি। গত ২২ অক্টোবর তার মুক্তির দাবিতে লাহোর থেকে ইসলামাবাদ অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে হাজার হাজার টিএলপি সমর্থক।
এছাড়া সে সময় তারা শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনে নবী মোহাম্মদ (সা) এর ব্যাঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ করায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কারের দাবিও তোলে।
এরপর টিএলপি সমর্থকদের রাজধানীতে প্রবেশ ঠেকাতে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করে পাকিস্তান সরকার। যার ফলে লং মার্চে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় টিএলপি সমর্থকেরা। এসব সংঘর্ষে অন্তত সাত পুলিশ কর্মকর্তা এবং চার বিক্ষোভকারী নিহত হন। এছাড়া বহু মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার তাদের ফরাসি দূতাবাস বন্ধ এবং রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করার এক দিন পরই ওই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, টিএলপি এবং সরকারের আলোচনা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
পাকিস্তানের জন্য পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ কারণ লং মার্চ শুরুর পর রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদ বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভের কারণে দেশটিতে ইতোমধ্যে লাখ লাখ ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কারা এই টিএলপি
তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান বা টিএলপি পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননামূলক আইনের যেকোনো পরিবর্তন বা ধর্ম সংশ্লিষ্ট ঘটনা যদি তাদের পছন্দানুযায়ী না হয়; তবে তার বিরোধিতায় গোটা দেশকে অচল করে দেয়ার মত কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
মুমতাজ কাদরীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর বিরোধিতা করার মধ্য দিয়ে এই ইসলামিক দলের অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আসে। ইসলামিক দলটির মতে সেই বিচারটি অনুচিত ছিল। ১ আগস্ট ২০১৫ সালে খাদিম হুসাইন রিজভী তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান গঠন করেন।
টিএলপির মতে, রাজনৈতিক এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরিয়াহ আইনকে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই দলের অধিকাংশ সদস্যই বেরলভী ইসলামিক ধারণাকেই ধারণ করেন।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের নির্বাচনে দলটি তাদের রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ক্রেনকে বরাদ্দ করে। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে সিন্ধু প্রদেশে এই দল দুইটি আসনও পায়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ