দেশের বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা মোবাইল ফোনে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি গ্রাহকরা। জানা গেছে, আজ শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে মুঠোফোনে দ্রুতগতির থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। যা উন্মুক্ত করা হয় বিকেল ৪টার পর।
বিভিন্ন অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (১৩ অক্টোবর) প্রথমে কুমিল্লা এবং পরে আরও ৫ জেলায় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। শুক্রবার ভোর থেকে আরও অনেক জেলার গ্রাহকরা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি।
দীর্ঘ প্রায় ১১ ঘণ্টা পর সচল করা হয় মোবাইল ফোনে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট। শুক্রবার বিকাল ৪টার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক ব্যবহারকারী তাদের মোবাইল ফোনে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সচল হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এরআগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়িয়ে দুদিন আগে কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় বুধবার থেকেই ছয় জেলায় মোবাইল ফোনে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
জেলাগুলো হলো— কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী ও চাঁদপুর। এসব জেলার মুঠোফোন গ্রাহকরা জানিয়েছেন, তারা দ্রুতগতির থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। ফোন অপারেটর সূত্রগুলোও এসব জেলায় দ্রুতগতির মোবাইল ফোন ইন্টারনেটসেবা বন্ধ রাখার তথ্য নিশ্চিত করেছে গণমাধ্যমকে।
শুক্রবার বিজয়া দশমীর দিন সকাল থেকে সারা দেশেই একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটদের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশনা পেয়েই শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে তারা থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছেন।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সেবা বন্ধ রাখতে বলেছে বিটিআরসি।
তবে বিটিআরসির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে। হয়তো কোনো অনিবার্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেটা এড়ানো যায়নি। তবে আমার মনে হয়, সমস্যাটি বেশিক্ষণ থাকবে না। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
কিন্তু কেন ফোরজি ও থ্রিজি সেবা বন্ধ রয়েছে, তা নিয়ে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বা মোবাইল অপারেটররা মোবাইল গ্রাহকদের কোন তথ্য দেয়নি।
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে “কারিগরি ত্রুটির কারণে” এ সেবা বন্ধ আছে, যা নিরসনে কাজ চলছে। যদিও কী ধরণের কারিগরি ত্রুটি তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণফোন ও রবি জানিয়েছে যে ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ফিরিয়ে আনতে তারা “সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছে”।
কেন ফোরজি ও থ্রিজি সেবা বন্ধ রয়েছে, তা নিয়ে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বা মোবাইল অপারেটররা মোবাইল গ্রাহকদের কোন তথ্য দেয়নি।
ফোন কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজী হননি, তবে তাদের কাছ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বুধবার কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর বেশ কিছু ব্যক্তি সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে এবং কাউকে কাউকে সমাবেশের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভও করতে দেখা গেছে।
কিন্তু এসব ঘটনার সাথে মোবাইল ফোনে ফোরজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কোন যোগসূত্র আছে কি-না, তা সরকার, বিটিআরসি বা অপারেটর— কেউই পরিষ্কার করে বলেনি।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলার কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, “অনিবার্য কারণবশত আমাদের ফোরজি ও থ্রিজি সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছি। সাময়িক এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত”।
রবি তাদের বার্তায় বলেছে, “দেশব্যাপী বন্ধ ফোরজি ও থ্রিজি সেবা ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছি। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত”।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকারের নির্দেশনাতেই অপারেটররা তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেও না জানার ভাণ করে থাকাটা বিস্ময়কর। কেন তারা এই উদ্যোগ নিলেন তারও কোনো সঠিক জবাব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে না, যা রহস্যজনক। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা অবশ্য কাম্য, কিন্তু সেটা এড়িয়ে সরকার কী বোঝাতে বা করতে চেয়েছেন তা রহস্যজনক। এবিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে, কেন বন্ধ করা হলো এবং পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই কেন এমন করতে হলো, তারও জবাবদিহিতা রয়েছে।
কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর ধর্মীয় উগ্রবাদদের সহিংস ঘটনার সাথে মোবাইল ফোনে ফোরজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধের যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কিছু হলেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া সরকারের চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা। সমস্ত কিছুকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে তারা। যেমনটি অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লায় পূজামণ্ডুপে কোরআন রেখে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫২
আপনার মতামত জানানঃ