যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের পর বাইডেন প্রশাসনের কাছেও বাংলাদেশ খুব একটা গুরুত্ব পাবে না বলে মনে করেন ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যান ২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার এক সাক্ষাত্কারে এমন মন্তব্য করেন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। আপনিও কি তাই মনে করেন?’—এ প্রশ্নের জবাবে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসির পররাষ্ট্রনীতির রাডারে বাংলাদেশ অনেক নিচের দিকে আছে। আমার মনে হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেমন হবে? বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তার কি কোনো পরিবর্তন হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে কুগেলম্যান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার চর্চার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সময়েও পরিবর্তনের সম্ভাবনা আমি দেখছি না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি পরিবর্তন আশা করতে পারি। প্রথমত, বাইডেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন। ভিন্নমত বা সমালোচকদের ধরপাকড়, হয়রানির মতো ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে বাইডেন প্রশাসন বেশি সমালোচনা করতে পারে। আমার মনে হয়, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বাইডেন প্রশাসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাবে। এটিও অবশ্য বাংলাদেশের সঙ্গে বড় পরিসরে সম্পৃক্ত।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্কে গণতন্ত্র, সুশাসনের মতো মৌলিক ইস্যু যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাইডেনের আমলেও কি এই ধারা অব্যাহত থাকবে? জবাবে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বে গণতন্ত্র ও অধিকার ইস্যুতে যথেষ্ট দৃষ্টি দেননি। বিশেষ করে অনেক ক্ষেত্রে তিনি নির্দ্বিধায় একনায়ক শাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। বাইডেন অন্তত মৌখিকভাবে হলেও বলেছেন যে তিনি এ ক্ষেত্রে অনেকটা ভিন্ন অবস্থান নেবেন এবং গণতন্ত্র উত্সাহিত করা হবে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম ভিত্তি।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার ধারণা গণতন্ত্র ইস্যুতে বাইডেন তাঁর কথা রাখবেন। তবে তিনি হয়তো সবার সঙ্গে সমান আচরণ করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র নয় বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি হয়তো বেশি গুরুত্ব দেবেন। অন্যদিকে ইসরায়েল ও ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বা কাছের অংশীদারদের বিষয়ে তিনি হয়তো কম কথা বলবেন।’
কুগেলম্যানের কাছে ছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় কোন দেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং কী কারণে? বাইডেন প্রশাসনের সময় কি এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?’ জবাবে এই বিশ্লেষক বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন বা তারও আগের কয়েকটি সরকারের মতো বাইডেন প্রশাসনের কাছেও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারত। ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে। তারা মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভালো স্ট্র্যাটেজিক মিত্র বা বাজি হলো ভারত। ভারতের আয়তন, শক্তি, অবস্থান এবং সর্বোপরি চীনের সঙ্গে দেশটির জোরালো বৈরিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ব ব্যাপক। বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও এশিয়ার জন্য হুমকি মোকাবেলার বিষয়টি ওয়াশিংটন ডিসির কাছে নয়াদিল্লির গুরুত্ব অনেক বাড়িয়েছে।’
সূত্র : কালের কণ্ঠ।
মিই/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ