স্পেনের লা পালমা দ্বীপের আগ্নেয়গিরিতে ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। এরপর দেশটির কর্তৃপক্ষ আশপাশের শহর থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। গত ৫ দিনেও ক্ষ্যান্ত হয়নি আগ্নেয়গিরিটি। পুড়ে ছাই শতাধিক বসতবাড়ি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, গত এক মাসে এই দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ২২ হাজার বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যার ফলে এত বছর পর এই আগ্নেয়গিরি ফের জেগে উঠেছে।
খবরে বলা হয়েছে, স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের এই লা পালমা দ্বীপের অবস্থান আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। রবিবার বিকালে হঠাৎ করেই আগ্নেয়গিরি থেকে ঝর্ণার মতো লাভা নির্গত হতে থাকে। এ সময় দ্বীপের আকাশে রক্তিম ঘন মেঘের সৃষ্টি হয়। গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। ওই আগ্নেয়গিরি থেকে ক্রমাগত লাভা নির্গত হতে থাকে। এই লাভা কুম্ব্রে ভিজা জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি দু’টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
এই ঘটনার পর দ্রুত ওই এলাকা খালি করে দেওয়া হয়। আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি অবস্থিত গ্রামগুলি থেকে লোকজন এবং খামার থেকে পশু পাখিদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ২ ঘন্টা বাদে পাহাড়ের ৫টি ফাটল থেকে লাভা বেরোতে শুরু করে। যার ফলে এল পাসো ও লস লানোস সহ ৪টি গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্ফোরণ হচ্ছে। সেখান থেকে অগ্নুৎপাতের ফলে ক্রমাগত লাভা বেরিয়ে আশপাশের জঙ্গল এবং গ্রাম গুলিকে প্রায় নষ্ট করে দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে।
ভিডিওতে আরও দেখা যায় যে, অগ্নুৎপাতের ফলে আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি অবস্থিত বেশ কয়েকটি গ্রাম, রাস্তা, জঙ্গল তখন আগুনের গ্রাসে চলে গেছে।
অগ্নুৎপাতের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের সরকার উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। প্রেসিডেন্ট এঞ্জেল ভিক্টর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান যে, প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর নেই।
স্পেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আশপাশের পাঁচ থেকে ১০ হাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেবে। কারণ আগ্নেয়গিরির প্রবাহিত লাভা ও আগুন তাদের ঘরবাড়ি ও খামারের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ন্যান্সী বলেন, সব কিছুই স্বাভাবিক ও সুন্দর ছিল কিন্তু ঘটনার পর সব শেষ হয়ে গেছে। সেখানে আমার অনেক বন্ধু ও পরিবার ছিল যারা সব কিছু হারিয়েছে। লাভার কারণে ২০০ বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
সব কিছুই স্বাভাবিক ও সুন্দর ছিল কিন্তু ঘটনার পর সব শেষ হয়ে গেছে। সেখানে আমার অনেক বন্ধু ও পরিবার ছিল যারা সব কিছু হারিয়েছে। লাভার কারণে ২০০ বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রপার্টি পোর্টাল আইডিয়ালিস্তা ধারণা করেছে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৭ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষকে সবজি এবং কাপড় পরিষ্কারের জন্য সতর্ক করেছে। কারণ এতে বিষাক্ত ছাই মিশে আছে, যা মানুষের পেটে যেতে পারে।
৫ দিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি
৫ দিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি স্পেনের লা পালমা দ্বীপের আগ্নেয়গিরি। কয়েক দিনের বিস্ফোরিত লাভায় পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় দুশো বাড়িঘর। আগুন ছড়িয়েছে দেড়শ হেক্টরের বেশি এলাকায়। বাতাসে মিলছে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি। প্রাণ বাঁচাতে এখনও বাড়িঘর ছাড়ছেন হাজারো মানুষ। তবে অপেক্ষা করা ছাড়া এই মুহূর্তে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শুক্রবার বিভিন্ন রুটে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে।
স্প্যানিশ ক্যারিয়ার বিন্টার এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, আমরা কখন পুনরায় ফ্লাইট চালু করতে পারব তা সঠিকভাবে বলা সম্ভাব নয়।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে তা কেউ বলতে পারছে না। কালো ছাইয়ে আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে তাই এখানকার সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
জানা যায়, যখন দ্বিতীয় গর্তটি থেকে নতুনভাবে অগ্নুৎপাত শুরু হলো তখন বোম ফাটার মতো শব্দ হতে থাকে। মানুষ দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করছে। কর্তৃপক্ষ স্থানটি থেকে নতুনভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছে। এরইমধ্যে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লাভা যেভাবে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
স্প্যানিশ জিওগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ট্রাভেলস মিলেট বলেন, পাহাড়ের পাঁচটি ফাটল দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে। এটি কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর আগে ১৯৭১ সালে এই দ্বীপপুঞ্জে অগ্ন্যুৎপাত হয়। তখন একজনের মৃত্যু হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৯
আপনার মতামত জানানঃ