ঢাকা শহর কতটা নিরাপদ? নগরবাসীর কতটা নির্ভয়ে চলতে পারে? এসব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সূচকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ভালো নয়। নিরাপত্তার দিক থেকে বিশ্বের নগরগুলোর মধ্যে এবার রাজধানী ঢাকা দুই ধাপ যদিও এগিয়েছে। কিন্তু এখনও তালিকার তলানিতেই তার অবস্থান। বিশ্বের ৬০টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ৫৪ নম্বরে। অন্য সূচকের তুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তায় ঢাকার সূচক সবচেয়ে কম। দি ইকোনোমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের সেইফ সিটি ইনডেক্সে সূচকে এই অবস্থান প্রকাশ করা হয়।
লন্ডনভিত্তিক প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনোমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট চলতি বছরের বিশ্বের নিরাপদ শহরের সূচক প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অবকাঠামো, ব্যক্তিগত সুরক্ষার সঙ্গে এবার নতুন করে পরিবেশগত সুরক্ষার ভিত্তিতে বিশ্বের মোট ৬০টি শহরকে নিয়ে করা হয়েছে নিরাপদ শহরের তালিকা।
পাঁচটি বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরে গড়ে একশ পয়েন্টের ভিত্তিতে সূচকটি তৈরি করেছে ইকোনোমিস্ট।
১০০ পয়েন্টের মধ্যে সব সূচকের গড় মিলিয়ে ঢাকা পেয়েছে ৪৮.৯০ পয়েন্ট। এর মধ্যে ঢাকা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সূচকে পেয়েছে ৫০.৯০, অবকাঠামোতে ৪৯.৬০, ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ৪৬.৬০ ও পরিবেশগত নিরাপত্তায় ৫৮.২০ পয়েন্ট। অন্য সূচকের তুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তায় ঢাকার সূচক সবচেয়ে কম। এতে পেয়েছে মাত্র ৩৯ পয়েন্ট। ডিজিটাল নিরাপত্তায় ৬০ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ৫৪তম।
সবচেয়ে ভালো শহর হতে গেলে পেতে হতো কমপক্ষে ৭৫.১ পয়েন্ট। ৫০.১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত পয়েন্ট পেলে ভালো শহর, ২৫.১ থেকে ৫০ পয়েন্ট পেলে মোটামুটি শহর এবং ২৫ পয়েন্টের নিচে পেলে নিরাপত্তার দিক থেকে একেবারেই খারাপ শহর হিসেবে ধরে নেওয়ার মান নির্ধারণ করা হয়।
দুই বছর অন্তর প্রকাশিত নিরাপদ শহরের তালিকায় ইকোনমিস্টের বিচারে এবার ঢাকার শহরের অবস্থান ৫৪তম। সর্বশেষ ২০১৯ সালের তালিকায় ৫৬তম অবস্থানে ছিল ঢাকা। এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকা ছিল ৫৮তম অবস্থানে। তবে ২০১৫ সালে ৫০টি শহরকে নিয়ে তালিকা করায় সেবার ঢাকার নামই ছিল না।
২০২১ সালের তালিকায় প্রথমবারের মতো নিরাপদ শহরের শীর্ষস্থানে জায়গা পেয়েছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন। শহরটি পেয়েছে ৮২.৪০ পয়েন্ট। শীর্ষ দশে থাকা বাকি শহরগুলো হলো— টরন্টো, সিঙ্গাপুর, সিডনি, টোকিও, আমস্টারডাম, ওয়েলিংটন, হংকং, মেলবোর্ন ও স্টকহোম।
১০০ পয়েন্টের মধ্যে সব সূচকের গড় মিলিয়ে ঢাকা পেয়েছে ৪৮.৯০ পয়েন্ট। এর মধ্যে ঢাকা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সূচকে পেয়েছে ৫০.৯০, অবকাঠামোতে ৪৯.৬০, ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ৪৬.৬০ ও পরিবেশগত নিরাপত্তায় ৫৮.২০ পয়েন্ট। অন্য সূচকের তুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তায় ঢাকার সূচক সবচেয়ে কম। এতে পেয়েছে মাত্র ৩৯ পয়েন্ট। ডিজিটাল নিরাপত্তায় ৬০ দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ৫৪তম।
এ ছাড়া নিউ ইয়র্ক ১১, লন্ডন ১৫, প্যারিস ২৩, সিউল ২৪, সাংহাই ৩০, আবুধাবি ৩১, দুবাই ৩৫, ইস্তাম্বুল ৩৭ ও রিয়াদ রয়েছে ৪৯তম অবস্থানে। আর তালিকার একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের। নিরাপদ নগর সূচকে নিচের দিকে থাকা বাকি শহরগুলোর মধ্যে কাসাব্লাংকা ৫৫, লাগোস ৫৬, কায়রো ৫৭, কারাকাস ৫৮ ও করাচি ৫৯তম স্থানে রয়েছে।
সব দিক মিলিয়ে কোপেনহেগেন নিরাপদ শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তায় শীর্ষে রয়েছে সিডনি। আর স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় টোকিও, অবকাঠামোতে হংকং, পরিবেশ নিরাপত্তায় ওয়েলিংটন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। যদিও ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় কোপেনহেগেনই সবচেয়ে এগিয়ে। উল্টোদিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় সবার নিচে করাচির অবস্থান। আর সব সূচক মিলিয়ে তালিকায় সবার নিচে রয়েছে ইয়াঙ্গুন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় ঢাকার দুই ধাপ অগ্রগতির মানে এই নয় যে ঢাকা শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও বাসযোগ্যতার উন্নয়ন ঘটেছে। বরং এর উল্টোটাই ঘটেছে। ঢাকা শহরের পরিবেশগত নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, যানজট ও আবাসন সমস্যা নিরসনসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তার বড় কারণ ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন।
দুঃখজনক বিষয় হলো, রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। এর আগে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থাই এ জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় ঢাকার দুই ধাপ অগ্রগতির মানে এই নয় যে ঢাকা শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও বাসযোগ্যতার উন্নয়ন ঘটেছে। বরং এর উল্টোটাই ঘটেছে। ঢাকা শহরের পরিবেশগত নিরাপত্তা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, যানজট ও আবাসন সমস্যা নিরসনসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তার বড় কারণ ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন।
দুঃখজনক বিষয় হলো, রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠেছে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই এখানে অনুপস্থিত। ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। এর আগে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থাই এ জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট।
তারা বলেন, ঢাকায় সুউচ্চ অট্টালিকার সংখ্যা বাড়ছে। উড়াল সড়কও হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার জীবনযাপন সুগম ও সুন্দর হয়েছে বলে মনে হয় না। এ নগরীতে পানিদূষণ ও বায়ুদূষণের ফলে নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। ক্ষতিকর বায়ু গ্রহণ করেই এ শহরে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ভারী ধাতুর দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অতিমাত্রায় শব্দদূষণ নগরবাসীকে মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে। বিল্ডিং কোড না মেনে ও অপরিকল্পিতভাবে ভবন গড়ে তোলার ফলে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা।
বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যে যেখানে পারছে যেকোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বিশিষ্টতা হারাচ্ছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে শহরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যানজটের কারণে নগরবাসীর প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা।
তারা বলেন, যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া, খাদ্যে ভেজাল, সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ এ শহরে নেই পয়োনিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। বাতাসে সিসা, খাদ্যে ভেজাল, গ্যাস ও পানির সমস্যা বহুদিন ধরে চলে আসছে। গণপরিবহন বলতে যা বোঝায়, ঢাকায় তা নেই। উচ্চ খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও তার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। গুটিকতক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা এখানে অনুপস্থিত। মাঠ ও পার্কগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে।
এখানে উন্নয়নের নামে বেশুমার অর্থ ব্যয় হয় ঠিকই, তবে সে অনুযায়ী উন্নয়ন দেখা যায় না। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঢাকার এই করুণ দশা। দক্ষ নেতৃত্বের অভাব আর ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতার কারণেই কোনো পরিকল্পনাই পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ঢাকা নয় দেশের অন্যান্য শহরকেও পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। সুষম উন্নয়ন করতে হবে গ্রামেও। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ