কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করায়, কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত অসুস্থতায় এবং আঘাতে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ লোকের মৃত্যু হচ্ছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সংস্থাটির মতে, মূলত দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণেই মৃত্যু ঘটছে। মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে এই মৃত্যু ঝুঁকি আরও খারাপ হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও শ্রম সংস্থার প্রথম যৌথ মূল্যায়নে ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক রোগব্যাধি, আঘাত ও কর্মক্ষেত্রে চাপের কারণে এই মৃত্যুর হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোভিডের কারণে কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিবেশের নাটকীয় পরিবর্তনের প্রভাব এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। খবর বাসস।
সংস্থাটির পরিসংখান মতে, ২০১৬ সালে কাজের সঙ্গে জড়িত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৯ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যা ২০০০ সালের ১৭ লাখ থেকে বেশি। সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করা দীর্ঘ কর্মঘণ্টা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি একটি প্রধান ঝুঁকি, ২০১৬ সালে এই দীর্ঘ কর্মঘণ্টা জনিত কারণে ৭ লাখ ৫০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৯টি পেশাগত ঝুঁকির কারণে এই জীবনহানি ঘটছে। এর মধ্যে অ্যাসবেস্টসের মতো কার্সিনোজেনের সংস্পর্শে আসা, দীর্ঘ সময় আসনে বসে থাকা এবং ম্যানুয়াল হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এই বিপর্যয় ঘটছে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে গ্যাস, ধোঁয়া এবং বাতাসের অন্যান্য দুষণের সংস্পর্শে আসায় এই স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটছে। দূষণের কারণে ২০১৬ সালে বিশ্বে ৪ লাখ পঞ্চাশ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক যে চাকরি ও কর্মক্ষেত্রে পরিবেশের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় কাজের এ সব রোগের কারণ, ২০১৬ সালে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত কারণে মৃতদের মধ্যে ৮২ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে দীর্ঘ কর্ম ঘণ্টার কারণে। ২০১৬ সালে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি রোগে ৪ লাখ ১৫ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ লোকের। হৃদরোগে মারা গেছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং সময়ের দীর্ঘতার কারণে মানুষের প্রাণহানি মোটেও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যদিও টিকে থাকার এ যুগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেককেই প্রচুর সময় দিতে এবং পরিশ্রম করে যেতে হচ্ছে যা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের করা আশঙ্কাজনক ও মর্মান্তিক তথ্যে বিশ্বব্যাপী সাবধানতা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সংখ্যা এখনও যেহেতু উর্ধ্বমূখী হারে চলছে, তাই মৃত্যুর হার বৃদ্ধিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশের কর্মসংস্থান, পরিমিত সময়ের কাজ নিশ্চিত হওয়া জরুরি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯১২
আপনার মতামত জানানঃ