মুসলমানদের নিজেদের ধর্মীয় আচার হিজাব পরে মার্কিন বিমান বাহিনীতে চাকরি করতে পারবেন এমন একটি ঘোষনা আসে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বিমানে হিজাব পরিধান করায় এক মুসলিম নারীর ওপর বর্ণবাদী হামলা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় আদালত। খবর আরব নিউজের।
মুসলিমবিদ্বেষী হামলার শিকার আয়শা তৌরি নামে ওই নারী মিশিগান স্টেট ইউভার্সিটির গবেষক দলের সহকারী। টুইন টাওয়ারে হামলার দিন অর্থাৎ গত ১১ সেপ্টেম্বর আটলান্টা থেকে স্পিরিট এয়ার লাইন্সের একটি বিমানে করে মিশিগান আসছিলেন।
এ সময় শ্বেতাঙ্গ এক নারী তার হিজাব দেখে মুসলিম সন্ত্রাসী বলে চিৎকার করতে করতে তার মুখে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন এবং বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী গালাগাল দিতে থাকেন।
এ ঘটনা বিমানের যাত্রীরা ভিডিও করে সামাজিত যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে মানবাধিকারকর্মীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় ওয়েন কাউন্ট্রি আদালতের নজরে এলে বর্ণবাদী এ হামলার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্পিরিট এয়ারলাইন্সের কর্মীরাও শ্বেতাঙ্গ ওই যাত্রীর বর্বর আচরণে বিব্রত বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই যাত্রীকে পরে আর তারা তাদের বিমানে ভ্রমণের সুযোগ দেবেন না।
এদিকে, মুসলমান ও শিখ ধর্মালম্বীরা নিজেদের ধর্মীয় আচার দাড়ি রেখে এবং হিজাব ও পাগড়ি পরে মার্কিন বিমান বাহিনীতে চাকরি করতে পারবেন। তবে এজন্য ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
নতুন পোশাক বিধিমালা অনুসারে, মুসলমান ও শিখরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ধর্মীয় আচারের অনুমোদন পাবেন ৩০ দিনের মধ্যে। আর যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মোতায়েন আছেন তাদের ৬০ দিনের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হবে।
এই নতুন বিধিমালার পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে কর্মরত মুসলমান ও শিখদের দাড়ি রাখতে এবং হিজাব ও পাগড়ি পরার অনুমতি নিতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এছাড়া এক এক করে বিবেচনা করে এই অনুমোদন দেওয়া হত। নতুন বিধিমালায় এই প্রক্রিয়া দ্রুততর ও সাধারণীকৃত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত খুব কম মুসলমান ও শিখদের মার্কিন বিমান বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা তাদের ধর্মীয় পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন।
২০১৮ সালে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে মায়সা অউজাকে হিজাব পরে চাকরি করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সহযোগিতায় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর তাকে এই অনুমতি দেওয়া হয়।
নতুন এই বিধিমালাকে স্বাগত জানিয়েছে মুসলিম ও শিখ সম্প্রদায়।
কাউন্সিল অর আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স-এর জাতীয় কমিউনিকেশন পরিচালক ইব্রাহিম হুপার বলেন, ধর্মীয় পোশাকের অনুমোদন ও বাহিনীদের সব ধর্মের মানুষের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে যাওয়া এই বিধিমালা।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ও কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম শিখ ধর্মালম্বী হিসেবে পাগড়ি পরার অনুমতি পাওয়া কামাল সিং কালসি ‘বিমান বাহিনীর ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন বিমান বাহিনীসহ ও সেনাবাহিনীর সব শাখায় আরও বিস্তৃত নীতির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া দরকার। যাতে করে যেসব জনগণকে এসব বাহিনী সুরক্ষা দেয় সেই শক্তি ও বৈচিত্র্যময়তা প্রকাশ পায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ