বাংলাদেশের প্রতিটা শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই চোখে পড়ে অহরহ কিন্ডারগার্ডেন। কোথাও ফ্লাট ভাড়া নিয়ে তো কোথাও ছোট একটা জায়গায় বিল্ডিং তুলে শুরু করেছে কিন্ডারগার্ডেন। এভাবে সারা দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
এর মধ্যে করোনা মহামারিতে গত দেড় বছরে আর্থিক সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার। বাকিগুলোর মধ্যে সরকারি নির্দেশনা মেনে খোলার মতো অবস্থা নেই কমপক্ষে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানের। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে আজ থেকে ক্লাস হচ্ছে না।
এদিকে, বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, তাদের ১০ শতাংশেরও কম বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। সে হিসাবে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশের মতোই হারাতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অন্যদিকে, করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতি থাকায় পেশা বদল করেছেন অনেক শিক্ষক। ফলে দেখা দিয়েছে শিক্ষকের সংকট। এই দেড় বছরে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে কিন্ডারগার্টেনগুলো। শিক্ষার্থী সংকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ শিক্ষকের টিকা না পাওয়া নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিন্ডারগার্টেনগুলোর সঙ্গে প্রায় ১০ লাখের মতো শিক্ষক জড়িত। তাদের একটি বড় অংশ টিকা পাননি। শিক্ষকদের অনেকে নিজ উদ্যোগে টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেও মেলেনি সমাধান।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি হাবিব রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বড় সংকট দেখা দিয়েছে শিক্ষক নিয়ে। কেউ খামার করছেন, কেউ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিয়েছেন, কেউ বেসরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ফলে তারা আর শিক্ষকতা পেশায় ফিরছেন না। নতুন শিক্ষকেরাও রয়েছেন দোটানায়। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের হারিয়ে আমরা পড়েছি বেকায়দায়।’
শিক্ষক নেতারা বলছেন, করোনার আগে সারা দেশে প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত কিন্ডারগার্টেনে। আর এখানে শিক্ষক ও কর্মচারী ছিলেন প্রায় ২০ লাখ। আর বন্ধ থাকা ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রায় ৮ লাখ।
তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে অনেকে শুধু মাসিক বেতনের শর্তে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের (২০২২ সাল) শুরুতে ভর্তি ফিসহ অন্য ফি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের ধারণা ১০ হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ নতুন করে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের কোনো সার্ভে নেই। আমাদের ধারণা, সারাদেশে কিন্ডারগার্টেনে ১০ লাখের মতো শিক্ষক আছেন। এই শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ এখনো করোনার টিকা পাননি। শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে টিকা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি নিজেও টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো টিকা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেনগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এজন্য সরকারের কাছে আমরা একটি প্রণোদনা চেয়েছি। আমাদের ধারণা বছরের শুরুতে যে শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়েছিল এখন তার ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। আমার স্কুলেই ২০০ জনের মতো ভর্তি হয়েছিল। তার মধ্যে যোগাযোগ রেখেছে মাত্র ২০-২৫ জন। সব কিন্ডারগার্টেনের একই অবস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিন্ডারগার্ডেনে একটি বড় সংখ্যার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করে। সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এজন্য অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মত কিন্ডারগার্ডেনের দিকেও প্রশাসনের নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ