আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালিবান-বিরোধী বিক্ষোভের কারণে সেখানকার অনেক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে তালিবানরা। তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার বন্ধ রাখতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে তারা। আজ বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের প্রতিবাদ, নারীদের অধিকার দাবি এবং তথাকথিত ‘পাকিস্তানী হস্তক্ষেপে’র নিন্দা জানাতে কয়েকশো লোক এ বিক্ষোভে যোগ দেন।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, আফগানিস্তানে তালিবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত তাদের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে যত বিক্ষোভ হয়েছে তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বড়।
তালিবান কাবুল দখলের পরই হেরাত শহরে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আফগান নারীরা। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী কাবুলেও। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলিও ছোঁড়ে সশস্ত্র তালিবান যোদ্ধরা।
এমন অবস্থায় তালিবানের কর্মকাণ্ডের খবর বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া আটকাতেই কাবুলের বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান সরকার।
গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে তালিবান। এই সরকারে নারীদের কোনও জায়গা হয়নি। আর এর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানিয়েছে আফগান নারীরা।
অবশ্য এর আগে থেকেই দখলকৃত এলাকায় তালিবান গোষ্ঠীটি কয়েক ডজন স্থানীয় রেডিও স্টেশন, সংবাদপত্র এবং সম্প্রচারকারীদের জোরপূর্বক বন্ধ করেছে।
দেশটিতে কয়েকটি আউটলেটকে পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলেও তারা তালিবানদের প্রোপাগান্ডা প্রচার করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের সঙ্গীত বা নারীদের কণ্ঠ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। আগের প্রতিবেদনের স্থানে তালিবান-অনুমোদিত বুলেটিন, কোরান থেকে তিলাওয়াত, এবং ইসলামী খুতবা প্রচারিত হচ্ছে।
তালিবানের বিরুদ্ধে যে কোনো খবর প্রচারের ব্যবস্থা বন্ধ করার উদ্দেশ্য থেকেই গণমাধ্যম কমিয়ে আনা হয়েছে। এবার সেই পথ ধরেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে তালিবান।
এদিকে, আফগানিস্তানের মৌলিক সেবাগুলো ভেঙে পড়ার মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা। জাতিসংঘের মানবিক সংক্রান্ত সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেনস লিয়ারকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের খাবার এবং অন্যান্য ত্রাণও ফুরিয়ে আসছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের এক ব্রিফিংয়ে ওসিএইচএ মুখপাত্র জেনস লিয়ারকে বলেন, লাখ লাখ আফগান নাগরিকের খাবার এবং চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সম্মেলনের আগে দাতাদের আরও বেশি অর্থ সহায়তার আহ্বান জানান।
এই বছরের বাকি সময়ে এক কোটি ১০ লাখ আফগান নাগরিকের জন্য আরও প্রায় ৬০ কোটি ডলার সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ। এছাড়াও দেশটিতে খরা ও খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
জেনস লিয়ারকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের মৌলিক সেবা ভেঙে পড়ছে আর খাবার ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ ফুরিয়ে আসছে। আমরা আন্তর্জাতিক দাতাদের এই আহ্বানে দ্রুত ও উদারভাবে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই বছর তালিবানের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানদের কর্মকাণ্ড বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করার চেষ্টা বেশ উদ্বেগজনক। প্রথমে গণমাধ্যম জোরপূর্বক বন্ধ করা হয়েছে এবং যে কয়েকটি গণমাধ্যম চালু আছে সেগুলোকেও নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে বিক্ষোভের খবর ছড়িয়ে পড়া এড়াতে ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করলো তালিবান। এতে করে তালিবানের কোনো নেতিবাচক কাজই বিশ্বের চোখে ধরা পড়বে না, ফলে আফগানিস্তান আবারও সেই অন্ধকার যুগে প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২০৩৪
আপনার মতামত জানানঃ