আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পথে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জাওজানে তালিবানরা একটি কারাগার দখল করার পর জেল ভেঙে সব বন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছিল। এরপর আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশের বাগরাম জেলার কারাগার থেকে পয়ষট্টি জন বন্দিকে মুক্তি দেয় তালিবান। এরপর একে একে দেশটির সবগুলো জেল থেকেই কয়েদিদের মুক্ত করে দিয়েছে এই সন্ত্রাসী সংগঠন।
সূত্রের খবর, সেই সময় আরও অনেকের সঙ্গে বাগরাম জেল থেকে বেরিয়ে আসে অন্তত ১৪ জন ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান বা আইএসকে-র সদস্য। এক্ষেত্রে ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার আর বিশ্বের জন্য চাঞ্চল্যকর তথ্য হল ওই ১৪ জনের বাড়ি ভারতের কেরালায়।
ভারতের দৈনিক পত্রিকা আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ২৬ আগস্ট কাবুলের তুর্কমেনিস্তান দূতাবাসের সামনে বোমা রাখতে গিয়ে ধরা পড়ে দুই পাকিস্তানি। এই দু’জনই আইএস-কের সদস্য। এদের সঙ্গে কেরালার ওই আইএস-কে সদস্যদের যোগাযোগ ছিল বলে জানা গেছে।
কাবুলের তুর্কমেনিস্তান দূতাবাসে বোমা রাখতে গিয়ে ধরা পড়া দুই পাক নাগরিক এবং কেরালার ওই ১৪ জনের যোগ রয়েছে বলে নিশ্চিত গোয়েন্দারা। তালিবানের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
তবে আভ্যন্তরীণ সূত্র মতে, কাবুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাক্কানি নেটওয়ার্কের মূল কেন্দ্র আফগানিস্তানের নানগরহর প্রদেশ আইএস-কেরও শক্ত ঘাঁটি। ফলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের সহযোগিতা নিয়ে আইএস-কে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ছক কষেছে কি না তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
পাশাপাশি এই খবরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা বেড়েছে। কারণ অশান্ত আফগানিস্তানে হিংসার ঘটনায় কেরালার নাম জড়িয়ে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে বেকায়দায় পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভারতের কাছে তা মোটেও কাম্য নয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, বাগরাম থেকে মুক্তি পাওয়া ১৪ জন কেরালার বাসিন্দার মধ্যে এক জন বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সেই সূত্রেই তাদের সম্পর্কে জানতে পারেন তদন্তকারীরা।
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে আইএস-এর মসুল দখলের পর কেরালার মল্লপুরম, কাসারগোদ ও কান্নুর জেলা থেকে বেশ কয়েক জন দেশ ছাড়ে। যোগ দেয় আইএস-এ। তাদের মধ্যে কয়েক জন মধ্য-পূর্ব ছেড়ে চলে আসেন আইএস-কের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত আফগানিস্তানের নানগরহর প্রদেশে।
এদিকে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির সরকারি এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুক্রবার রাতে এ তথ্য বিবিসিকে জানিয়েছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলায় যারা মারা গিয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আফগান বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া ১৩ মার্কিন নাগরিক, দুই ব্রিটিশ নাগরিক এবং আরও একজন ব্রিটিশ নাগরিকের সন্তানের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় একটি শাখা আইএস-কে হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা বিশ্ব জুড়েইও সব কিছু ছাপিয়ে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিই এখন আলোচনার মূলে। কাবুল বিমানবন্দরে আইএসের হামলা আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে সন্তাসবাদের উত্থানের দিকেই ইঙ্গিত করছে। এই ইঙ্গিতের সুতো ধরে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের ঘোড়া এবার কোনদিকে ছুটবে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই চাপে থাকা ভারতের জন্য কেরালার ১৪ ভারতীয়র এই বিশ্ব তোলপাড় করা হামলার সাথে যুক্ত থাকাটা একেবারেই স্বস্তির নয়। কোনদিক থেকে খড়গ নেমে আসবে ভারতের উপর এটাই এখন দেখার বিষয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫০৪
আপনার মতামত জানানঃ