কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে দানবাকার প্রাণী ডাইনোসর। ডাইনোসরের অস্তিত্ব এখন বইয়ের পাতায় আর জীবাশ্মে বন্দি। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে জীবাশ্ম গবেষণা করে ডাইনোসর সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত ডাইনোসর নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা নিয়মিতই নিচ্ছে নতুন মোড়। সবশেষ জানা গেল, অস্ট্রেলিয়ায় বিচরণ ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডাইনোসরের। তারা দানবাকার এ প্রজাতির নাম দিয়েছেন ‘দ্য সাউদার্ন টাইটান’ বা দক্ষিণাঞ্চলীয় দানব।
২০০৭ সালে আবিষ্কার হয়েছিল এই ডাইনোসরের নিদর্শন। এখন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পাওয়া সবচেয়ে বড় ডাইনোসর ছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন প্রজাতির ডাইনোসরটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এযাবৎকালে আবিষ্কৃত বৃহত্তম ডাইনোসর। একই সঙ্গে সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত ডাইনোসরের সন্ধান মিলেছে, সেগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ১৫টি প্রজাতির একটি।
অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দানবীয় ডাইনোসরের শরীরের অংশ বা জীবাশ্মের সন্ধান মিলছে। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রজাতিটি সবথেকে বড় ১৫টি প্রজাতিগুলোর একটি। এটির উচ্চতা ছিল ২১ ফুট এবং এটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১০০ ফুট। সহজ হিসেবে বোঝাতে চাইলে বলা যায়, এ প্রজাতির ডাইনোসরগুলোর আকৃতি ছিলো একটি বাস্কেটবলের কোর্টের সমান।
জানা যায়, কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথমবারের মতো এর হাড়ের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। গত এক দশক ধরে এই হাড় নিয়ে চলেছে বিস্তর গবেষণা। এরপরই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, এটি আসলে একটি বৃহদাকার ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর।
অন্যতম প্রধান গবেষক ড. স্কট হকনাল বলেন, ‘কাছাকাছি তিন গোত্র উইনটোনোটাইটান, ডায়াম্যানটাইনোসরাস অ্যান্ড সাভানাসরাসের সমগোত্রীয় এটি। মনে হচ্ছে যেন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ডাইনোসরগুলো সবাই বড় একটি সুখী পরিবারের অংশ ছিল।’
প্রত্যন্ত অঞ্চলে কঙ্কালের সন্ধান, বিশাল আকৃতি আর ভঙ্গুর অবস্থার কারণে এটি নিয়ে গবেষণায় লেগেছে দীর্ঘ সময়।
যদিও ডাইনোসরটির দেহাবশেষের অনেকটাই অক্ষত ছিল বলে জানিয়েছেন কুইন্সল্যান্ড মিউজিয়াম ও ইরোমাঙ্গা ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকরা।
বিশাল আকৃতির এই ডাইনোসরের মাথা ছিল ক্ষুদ্রাকার। গলা আর লেজ ছিল অনেক লম্বা। খাম্বার মতো মোটা পা ছিল। এই ডাইনোসর ছিল তৃণভোজী।
এর চারণকাল ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ থেকে ৯ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে।
চিলিতে নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের সন্ধান
কঙ্কাল বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির এক ধরনের ডাইনোসরের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। ৬৬০ কোটি বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির উত্তরাঞ্চলে ছিল এ ডাইনোসরের বিচরণ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শুষ্কতম মরু অঞ্চল আতাকামায় ডাইনোসরের এ কঙ্কালের প্রথম সন্ধান মেলে। বলা হচ্ছে, এটি প্রকৃতপক্ষে নিরামিষভোজী এক ধরনের টাইটানোসর। ছোট মাথা, লম্বা ঘাড় আর সমান পিঠ ছিল এর।
প্রাথমিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, এর বিচরণ মরু অঞ্চলে ছিল না; বরং ফুলের গাছ, ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেই পছন্দ করত এটি।
চিলির একদল ভূতত্ত্ববিদ এ গবেষণাটি করেছেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কার্লোস আরেভালো।
ক্রিটাসিয়াস রিসার্চ জার্নালে প্রকাশ হয় মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি। এতে বলা হয়, নব্বইয়ের দশকে মাটির নিচ থেকে ডাইনোসরটির দেহাবশেষ বের করে আনা হয়। গবেষণা চলে ২০০০ সালের পরেও।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডাইনোসরের কঙ্কালটির মধ্যে বাহুর ঊর্ধ্বাংশের হাড়, উরুর হাড়, নিম্নাঙ্গের হাড়, মেরুদণ্ডের হাড় ও পিঠের অংশের হাড় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডাইনোসরটি লম্বায় প্রায় ২০ ফুট ছিল; বয়সও খুব বেশি ছিল না।
লম্বা ঘাড়ের, লম্বা লেজের পাতাখেকো এই ডাইনোসরের নাম দেয়া হয়েছে আরাকার লিকানান্থি। কুঞ্জা নৃগোষ্ঠীর ভাষায় এর অর্থ আতাকামার হাড়।
ডাইনোসরটির দেহাবশেষ সর্বসাধারণকে দেখানোর জন্য চিলির মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে রাখা হবে।
চিলিতে সন্ধান পাওয়া এটি তৃতীয় ডাইনোসর। এর আগে ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনায় মেলে অন্যতম বৃহত্তম ডাইনোসরটির সন্ধান। টাইটানোসর জাতের ওই ডাইনোসরটি ৩৭ মিটারের বেশি লম্বা ছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০১
আপনার মতামত জানানঃ