আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় জালালাবাদের লোকজন জাতীয় পতাকা না বদলানোর দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে। সেখানে নির্বিচারে গুলি করেছে তালিবান। এতে অন্তত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জালালাবাদের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ ওই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। দেশটির জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করে তালিবানের পতাকা উত্তোলন করার পরেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ওই বিক্ষোভের ভিডিও মুহুর্তেই ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিনিধি রব ম্যাকব্রাইড কাবুল থেকে জানান, ‘আমরা জালালাবাদ শহর থেকে গুরুতর গণ্ডগোলের খবর পাচ্ছি। কাবুলের পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রদেশটি বাণ্যিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তালিবান সদস্যরা আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা’।
তিনি আরও বলেন, ‘তালিবান ক্ষমতা দখলের পর কাবুলের পতাকা নামিয়ে গোষ্ঠীটি নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ খুব খুশি নয়’।
‘কাবুল থেকে পতাকা নামাতে পারলেও জালালাবাদের মানুষ এটা মেনে নিচ্ছে না। সেখানে তাদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা গেছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও দেখেছি হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন’ এমনটাই জানান রব ম্যাকব্রাইড।
তালিবানের পতাকা নামাতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। তালিবানদের সঙ্গে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এতে উভয়পক্ষের হতাহত হন বেশ কজন। হতাহাতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে বিবিসির খবরে প্রকাশ, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় জালালাবাদ শহরের রাস্তায় মানুষের বিক্ষোভের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা পরিবর্তন না করার জন্য তালিবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। মঙ্গলবার অন্যান্য এলাকা থেকে একই ধরনের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
আফগানিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, শুধু সাধারণ নাগরিকদের উপরই না, বিক্ষোভের জায়গায় উপস্থিত বেশ কিছু সাংবাদিকদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
নেটমাধ্যমে ছেয়ে যাওয়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, আফগানিস্তানের পতাকা হাতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ জালালাবাদের রাস্তায় নেমেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কেন জাতীয় পতাকার পরিবর্তে তালিবানের পতাকা থাকবে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তারা। হঠাৎ-ই গুলির শব্দ। আর তার পরই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে দেখা গেল বিক্ষোভকারীদের। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা সূত্রে।
আফগানিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, শুধু সাধারণ নাগরিকদের উপরই না, বিক্ষোভের জায়গায় উপস্থিত বেশ কিছু সাংবাদিকদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় সংগঠনটি। এ নিয়ে পুরো আফগানিস্তানজুড়েই চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ বুধবারও দেশটি ছেড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। তবে এবারই প্রথম কোনো শহরকে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেলো।
মূর্তি থাকায় পার্কে আগুন ধরাল তালিবান
আফগানিস্তানে এ বার শিশুদের একটি পার্ক পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তালিবানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, পার্কে কিছু মূর্তি বসানো ছিল। ইসলাম মূর্তিপুজো নিষিদ্ধ। এই যুক্তি দিয়েই গোটা পার্কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে দেশটির উত্তরের জৌজান প্রদেশের শেবেরগানের বেগা এলাকার ওই পার্কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইসলামে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ। এদিকে ওই পার্কে কিছু মূর্তি বসানো ছিল। এই যুক্তি দেখিয়ে গোটা পার্কে আগুন ধরিয়ে দেয় তালিবান। আগুন ধরানোর কিছুক্ষণ পর তা গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পার্কে আগুন ধরার সেই দৃশ্য নেটমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গোটা পার্কে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।
আফগানিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ইহতেশাম আফগান জানিয়েছেন, তালিবানের হাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পার্কটি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৬
আপনার মতামত জানানঃ