অনুপম সৈকত শান্ত
১
‘বাম জামাতি’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ‘বামাতি’। তো, কারা এই ‘বামাতি’? বাংলাদেশের বামপন্থী – মার্কসবাদীদের যারা (প্রায় সবাই) মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মুজাহিদিন, তালি বান, আল কায়েদা, আইএস – এদের উত্থানের পেছনে ইসলাম ধর্ম, কোরআন – প্রভৃতির কথা বাদ দিয়ে বা গৌন হিসেবে দেখিয়ে যখন সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব, তেলবানিজ্য, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতিকে দেখে, মুজাহিদিন – তালি বান, আইএস প্রভৃতি জঙ্গীগোষ্ঠীকে যখন সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্ট বলে, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ, হামলা, দখলদারির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন তাদেরকে ডাকা হয় ‘বামাতি’! কারণ? জামাতিরা (সব ইসলামিস্টদের বুঝানো হচ্ছে) মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজবাদের বিরুদ্ধে, বামরাও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, জামাতিরা ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারির বিরুদ্ধে, বামরাও ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারির বিরুদ্ধে, জামাতিরা ফিলিস্তিনীদের উপরে ইজরাইলিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, বামরাও ফিলিস্তিনীদের উপরে ইজরাইলিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, জামাতিরা পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষী রাজনীতির বিরুদ্ধে, বামরাও সাম্রাজ্যবাদীদের মুসলিম-বিদ্বেষী রাজনীতি ও তথাকথিত ওয়ার অন টেরর এর নামে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য – দখলদারিত্ব কায়েম আর তাকে জায়েজ করতে মানুষের মাঝে ধর্মবিদ্বেষ জারি রাখতে একে ক্রুসেড হিসেবে আখ্যা দেয়া – এসবের বিরুদ্ধে! ফলে, জামাতি ও বামদের মাঝে কত মিল! এইসব মিলের কারণেই বামদের ডাকা হচ্ছে ‘বামাতি’ বলে, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে সবাইকে দেখানো যে বামরাও আসলে জামাতিদের মতই ঐসব ইসলামিক জঙ্গীগোষ্ঠীর ধারক, বাহক ও সমর্থক!
২
‘সালাফি সেক্যুলার’ বা ‘সালাফি নাস্তিক’ কারা? সেক্যুলার বা নাস্তিকদের মাঝে যারা মধ্যপ্রাচ্যে তালি বান, আল কায়েদা, আইসিসের উত্থান, মধ্যপ্রাচ্য সহ দুনিয়াজুড়ে তাদের ও তাদের মতাদর্শের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর তাণ্ডব, প্রভৃতির পেছনে সাম্রাজ্যবাদের সংযোগের কথা না বলে বা কম বলে কেবল ইসলামকে দোষী বানায়, কোরআন – হাদীস দেখায়, কিংবা বাংলাদেশেও আল কায়দা, আনসার বাংলা, জেএমবি জঙ্গীগোষ্ঠীর তাণ্ডব, নাস্তিক হত্যা, হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দির ভাংচুর, হামলা – প্রভৃতির পেছনে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের ভূমিকার কথা না বলে বা কম বলে, ইসলামকেই প্রধান দোষী মনে করে, কোরআনের আয়াত দেখায় বা নবীর বিভিন্ন জিহাদে ভিন্নধর্মীদের উপরে আক্রমণ, কাবা সহ বিভিন্ন মন্দিরের দেবদেবীর মূর্তি ভাঙ্গা – ইত্যাদি দেখায়, তারাই হচ্ছে সালাফি সেক্যুলার! কারণ? সালাফিরা করআনের আয়াতের লিটারাল অর্থ প্রচার করে, এই নাস্তিকরাও কোরআনের আয়াতের লিটারাল অর্থ প্রচার করে, সালাফিরা ইসলামের জিহাদী বা জঙ্গীবাদী, হিংসাত্মক বানী প্রচার করে, এই নাস্তিকরাও ইসলামের জঙ্গীবাদী, ইহুদী-নাসারা-মুশরিক-কাফের বিদ্বেষী বানী প্রচার করে, সালাফিরা ইসলামকে জিহাদী, আগ্রাসী ধর্ম হিসেবে দেখায়, এই নাস্তিকরাও ইসলামকে জঙ্গী, ঘৃণাবাদী, অশান্তির ধর্ম হিসেবে দেখায়, সালাফিরা নবীকে ও তার সাহাবীদেরকে তলোয়ারবাজ, অকুতোভয় যোদ্ধা, বিধর্মী-কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সৈনিক হিসেবে প্রচার করে, নাস্তিকরাও নবী মোহাম্মাদ ও তার সাহাবীদেরকে যুদ্ধবাজ নেতা, আরবের ইহুদী, মুশরিক, কাফেরদের কচুকাটা করা খুনী ও হত্যাকারী হিসেবে দেখায়, সালাফিরা নারীর উপরে পুরুষের আধিপত্য, পুরুষের বহুবিবাহ, জিহাদে বিধর্মী নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ব্যবহার প্রভৃতিকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ইসলাম বা শরীয়ত সম্মত হিসেবে দেখায়, এই নাস্তিকরাও ইসলামী শরিয়তে থাকা পুরুষের বহুবিবাহ প্রথা, নারীর পরাধীনতা, বিধর্মী-কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে কথিত জিহাদে নারী ধর্ষণ- এসব নিয়ে কথা বলে! ফলে, সালাফি ও নাস্তিকদের মাঝে অসংখ্য মিল আছে বিধায়, এইসব নাস্তিকদের সালাফি সেক্যুলার বলে ডাকা হয়! আরো বলা হয় তারা ইসলামোফোব বা ইসলাম বিদ্বেষী। সালাফিরা যেমন ইহুদী বিদ্বেষী, নাস্তিক বা কাফের বিদ্বেষী, হিন্দু বিদ্বেষী, শিয়া বিদ্বেষী, কাদিয়ানি বিদ্বেষী; একইভাবে সালাফি সেকুলাররা ‘ইসলাম’ বিদ্বেষী!
৩
কারা বামদেরকে ‘বামাতি’ বলে ডাকে? বামপন্থীদের ‘বামাতি’ বলে ডাকা শুরু হয়েছে সেই ব্লগ যুগে! মূলত আওয়ামী পন্থী ব্লগাররাই বাম ব্লগারদের ‘বামাতি’ বলে ডাকা শুরু করে! শুরুটা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপরে যে সাম্প্রদায়িক হামলা, নিপীড়ন, উচ্ছেদ, তার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা যখন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা, আওয়ামী রাজনীতির ক্ষমতা চর্চা, ভারতে মাইগ্রেট করা হিন্দুদের সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের পেটে যাওয়া- প্রভৃতি নিয়ে বলা শুরু করলো, তখনই বস্তুত বামপন্থীদেরকে বামাতি বলে ডাকা শুরু করে! কেননা, এতদিন সারাদেশে সাধারণভাবে আওয়ামী ভাষ্য সর্বাধিক প্রচারিত ছিল যে, বিএনপি-জামাতই হচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক হামলা-নিপীড়নের হোতা আর আওয়ামীলীগ হচ্ছে সংখ্যালঘুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, উদ্ধারকর্তা, ত্রাতা এবং প্রকৃত সেক্যুলার! ফলে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্যে বিএনপি-জামাতকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করা তারা ভালোভাবে নিতে পারলো না, বামদের এ ধরণের বক্তব্যকে বিএনপি-জামাতের প্রতি ঘনিষ্ঠতা হিসেবে দেখাতে চাইলো, বিশেষ করে এরকম বক্তব্য আসলে জামাতি চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত বুঝাতেই বামপন্থীদেরকে ‘বামাতি’ বিশেষণ দেয়া শুরু করলো! ব্লগে তখন নাস্তিক, সেক্যুলার ব্লগাররাও বেশ সক্রিয়, ব্লগে বিশেষ করে বিএনপি-জামাত জোট যখন ক্ষমতায় সে আমল থেকে জামাত বিরোধী মুভমেন্টে নাস্তিক ও আওয়ামী ব্লগাররাও (এবং বামপন্থী ব্লগাররাও) অনেক ক্ষেত্রে একত্রে শামিল হয়েছে, তাদের মাঝে যোগাযোগ, চিন্তার আদান প্রদানও হচ্ছে! তো, দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ,আদিবাসীদের উপরে সাম্প্রদায়িক হামলা, নিপীড়নের পেছনে নাস্তিক ব্লগাররা অনেকে ইসলামের ভূমিকা, কিভাবে হামলাকারীরা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের ইসলামকে ব্যবহার করে উসকে দেয়, কিভাবে মসজিদ, ওয়াজ প্রভৃতি এসব হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে – এসব নিয়ে লেখালেখি করছে। যেসব ঘটনায় সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা মিডিয়ায় চলে আসে, সেগুলোতে আওয়ামী ব্লগাররা ও আওয়ামী পন্থী নাস্তিক ব্লগাররা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা ঢাকতে নাস্তিকদের এসব পোস্ট শেয়ার দিতো, সেখানে বামপন্থী ব্লগাররা যখন তর্ক করতো, ইসলাম বা ঢালাওভাবে মুসলমানদের ভূমিকার চাইতেও যে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা, সরকারের ব্যর্থতার কথা বলতো, তখন বামদের বলা শুরু হলো ‘বামাতি’। কারণ হিসেবে বলা হলো, বামরা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মন যুগিয়ে রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে ইসলাম নিয়ে কথা না বলে সমস্ত দোষ রাজনীতির উপরে দিচ্ছে! এই ‘বামাতি’ ডাকটা এভাবেই আওয়ামীপন্থী নাস্তিক ব্লগাররা পাকাপাকিভাবে ব্যবহার করা শুরু করলো! অনেক সময়ে প্রাক্তন বাম (বর্তমানে ধার্মিক বা ইসলামবাদী, কিংবা বুর্জোয়া রাজনীতির ধারক বাহক, মন্ত্রী, এমপি) এর ধর্মীয় আচরণ যেমন নামাজ-হজ্জ, কিংবা ইসলামবাদী অবস্থান (যেমন- ফরহাদ মাজহার, আল মাহমুদ) দেখিয়েও তাদেরকে ‘বামাতি’ বলে হাসাহাসি করা হতো! এই ব্যবহার আরো বাড়লো, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যখন বামরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, বিশ্বরাজনীতি, তেলকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার লড়াই- এসব নিয়ে বলা শুরু করলো! আওয়ামীপন্থী নাস্তিক ও সেক্যুলার অংশের বাইরেও যারা মূলত পশ্চিমা ভাবাদর্শী নাস্তিক-সেক্যুলার, বিশেষ করে তাদের অনেকেই বামবিরোধী বা সমাজতন্ত্র – কমিউনিজম বিরোধী, তারাও এই ‘বামাতি’ বিশেষণ লুফে নেয়! এরা আসলে মার্কিন ও ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যবাদের অনুসারি, ক্ষেত্রবিশেষে সুবিধাভোগী! তারা মনে করে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, রাজনীতিত, সেক্যুলার চিন্তা দর্শনে এগিয়ে থাকা পশ্চিমা প্রভুরাই এশিয়া, আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া, ধর্মীয় অন্ধকারে নিমজ্জিত দেশগুলোতে আলো ছড়াতে পারে, সেখানকার অধিবাসীকে জঙ্গীবাদ, নারীর উপরে অবমাননা, একনায়কতন্ত্র এর কালো হাত থেকে রক্ষা করতে পারে! সেই জায়গায় বস্তুত বামপন্থীদের কাছ থেকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ায় এবং সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষ নিয়ে সরাসরি যুক্তি তর্কে অবতীর্ণ হওয়ার মত সামর্থ্য না থাকায় – এরকম ‘বামাতি’ বলে ট্যাগিং দেয়ার পথ নেয়!
৪
কারা নাস্তিকদের ‘সালাফি সেক্যুলার’, ‘ইসলামোফোব’ বলে ডাকে? ব্লগ যুগে এই ইসলাম বিদ্বেষী বা ইসলামোফোব বলে ডাকার শুরুটা হয় মডারেট মুসলিমদের হাত ধরে। মডারেট মুসলিমরা নাস্তিক ব্লগারদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়তো- এত ধর্ম থাকতে কেন শুধু ইসলাম! বস্তুত ব্লগে নাস্তিকরা বিচিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতো, দর্শন – বিজ্ঞান – ইতিহাস – অন্যান্য ধর্ম – মিথ প্রভৃতি, কিন্তু ইসলাম নিয়ে লেখাগুলোতেই বেশি তর্ক বিতর্ক হতো এবং ধার্মিকদের চোখে কেবল ঐ পোস্টগুলোই পড়তো। কেন শুধু ইসলাম নিয়ে লেখে, এ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলেও, শেষে গিয়ে ঠেকে ব্লগের নাস্তিকরা কেন ইসলাম বিদ্বেষী! হিন্দু বিদ্বেষ, ইহুদী বিদ্বেষ যেরকম বর্ণবাদী সেরকম নাকি ইসলাম বিদ্বেষও (মুসলিম বিদ্বেষ বলছে না) বর্ণবাদী আচরণ! ইসলামের সমালোচনাকে কেন বিদ্বেষ বলা হবে আর ইসলামের প্রতি সমালোচনা বা বিদ্বেষে অসুবিধা কি – এর জবাব তেমন পাওয়া যায় না! সে সময়ে সামুব্লগে কোরআনে থাকা অসংখ্য ঘৃণাবাদী, বিধর্মীদের হত্যার বিধান থাকা আয়াতের সংকলন করে ব্লগপোস্ট এসেছিলো, বিভিন্ন হাদীসে, নবীর সিরাতে থাকা অসংখ্য যুদ্ধের সংকলন করে ব্লগ লেখা হয়েছিলো, নারী বিদ্বেষী আয়াত ও হাদীসেরও সংকলন করা হয়েছিলো! এসবের জবাবে মডারেট মুসলিমদের সাধারণ জবাব ছিলো, ঐসব আয়াত আর হাদীসগুলোর লিটারাল অর্থ পড়লে হবে না, ঐ সময়ের কনটেক্সট বুঝে পড়তে হবে। তারাও বিভিন্ন ঘৃণাবাদী আয়াতের কনটেক্সট, নবীর বহুবিবাহের কনটেক্সট, নারীবিদ্বেষী আয়াতগুলোর কনটেক্সট আলোচনা করে ব্লগপোস্ট লেখতো! ফলে, কোরআন ও হাদীসের এই যে লিটারাল বনাম কনটেকচুয়াল পাঠ নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক তা ঐ সময়েই ব্লগে হয়েছিলো! এরপরে, যখন তালেবান, আল কায়েদা হয়ে আইএস মধ্যপ্রাচ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে হামলা শুরু করলো, বাংলাদেশেও জেএমবি, আনসার বাংলার জঙ্গীরা তাণ্ডব শুরু করলো, এবং বিভিন্ন হুজুর ওয়াজে কোরআনের এসব ঘৃণাবাদী আয়াতের, হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেয়া শুরু করলো, তখন নাস্তিকদের অনেকেই কোরআন – হাদীসের এসব ঘৃণাবাদী বক্তব্য যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে উসকিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে, ইসলাম তথা কোরআন-হাদীসে বিশ্বাস যে মুসলমানদেরকে এরকম জঙ্গী সংগঠনগুলোর রিক্রুটমেন্টে ভূমিকা রাখছে, সেসব নিয়ে লেখালেখি করা শুরু করলো! অন্যদিকে, মডারেট মুসলিমরা ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় বলা শুরু করলো, জিহাদিস্টদের ইসলাম আসল বা সহীহ ইসলাম নয়, একইভাবে নাস্তিকরাও কোরআন-হাদীস ঘেটে ইসলামের যে রূপ দেখাচ্ছে, সেটাও সহীহ ইসলাম নয়! এটা বলতে গিয়েই তারা প্রশ্ন তুলা শুরু করলো – জিহাদিস্ট বা সালাফিস্টদের মত নাস্তিকরাও কেন কোরআন-হাদীস ঘেটে ঘৃণাবাদী বক্তব্য প্রচার করছে? সেক্যুলার, প্রগতিশীলদেরও একটা অংশ ভাবলো, ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে দেখানো গেলে, ইসলামের মধ্যকার যাবতীয় ভালো ভালো দিক দেখানো হলে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বুঝি শান্তির ইসলামের পথে পা বাড়াবে, তারাই জিহাদিস্টদের বিরুদ্ধে বড় বর্ম হবে। সে জায়গা থেকেও কথিত সেক্যুলার, প্রগতিশীল ব্লগার, ফেসবুকাররাও মডারেট মুসলিমদের পক্ষ নিতে থাকে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, ইসলামকে নিয়ে এত খোচাখুচিতে বেশ বিরক্ত হয়। এরকম এক পর্যায়েই মডারেট মুসলিমদের কন্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভুত হওয়া ও নিজেকে সেক্যুলার, প্রগতিশীল হিসেবে পরিচয় দেয়া এক ব্লগার নাস্তিকদের জন্যে এই “সালাফি নাস্তিক”, বা “সালাফি সেক্যুলার” বিশেষণ আবিস্কার করে, সেখান থেকে “জিহাদি সেক্যুলার”, “নাস্তিক মোল্লা”, “মৌলবাদী নাস্তিক” – এরকম আরো কিছু টার্মেরও প্রচলন হয়। লেখা হয় “অভিজিৎ রায় কেন সালাফি সেক্যুলার?” মডারেট মুসলিমরা এই বিশেষণটা লুফে নেয়! মডারেটদের মত কথিত সেই সেক্যুলার – প্রগতিশীল অংশের কেউ কেউ ‘সালাফি সেক্যুলার’ বা ‘উগ্র নাস্তিক’দের ইসলামোফোবও বলে অভিহিত করা শুরু করে!
৫
“বামাতি” আর “সালাফি সেক্যুলার” – দুই বিশেষণের মাঝে মিল কি? বামরা সাধারণভাবেই জামাতিদের বিরুদ্ধে, জামাত-শিবিরের রাজনীতি, দর্শন এর সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়েই তাদের রাজনীতি। অথচ, বাম ও জামাতিদের বক্তব্যের কিছু কিছু মিল দেখিয়ে বামদেরকে ‘বাম-জামাতি’ বা ‘বামাতি’ বলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে বামদের প্রতি অশ্রদ্ধা, অপমান, ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া! তাদেরকে ঘৃণ্য জামাতিদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে বামদের প্রতি একটি হাসি-মশকরা, অশ্রদ্ধা, ঘৃণা ছড়ানোই একমাত্র উদ্দেশ্য! একইভাবে, নাস্তিকরা ও সেকুল্যাররা সালাফিস্ট-জিহাদিস্ট জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার, এমনকি তারা যখন সালাফিস্টদের মত কোরআন-হাদীসের ঘৃণাবাদী বক্তব্য সামনে নিয়ে আসে, তখনো এগুলো যেভাবে ঘৃণা ছড়ায়, এসব বক্তব্যই যে এরকম জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোর সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের রিক্রুট করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে- সে জায়গা থেকেই আলোচনাটা তুলে। অথচ, যাদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের সমস্ত ফাইট, তাদের নামের সাথে জুড়ে দিয়েই নাস্তিকদের বলা হচ্ছে ‘সালাফি নাস্তিক’! সালাফি মুসলমান বললেই সবাই যেভাবে জঙ্গী, ভয়ানক উগ্র, বিধর্মী-বিদ্বেষী মুসলমানদের বুঝে, নাস্তিকদের সামনে এই সালাফি লাগিয়ে দিয়ে, নাস্তিকদেরও ‘উগ্র নাস্তিক’, ‘ইসলামোফোব’ – এরকম অভিধা দেয়াও সহজ হয়ে গেলো! এভাবেই ‘সালাফি সেক্যুলার’ বিশেষণও ‘বামাতি’ বিশেষণের মতই প্রচণ্ড ঘৃণাবাদী একটা বিশেষণ! নাস্তিকদের প্রতি অশ্রদ্ধা, অপমান, ঘৃণা ছড়ানো বাদে এর আর কোন উদ্দেশ্য নেই!
৬
“বামাতি” ও “সালাফি সেক্যুলার” বিশেষণ কি গালি? হ্যাঁ, অবশ্যই গালি। আগেই বলেছি – ‘বামাতি’ বিশেষণটি যেমন বামদের প্রতি অপমান – অশ্রদ্ধা – ঘৃণা প্রকাশে ব্যবহৃত হয়, একইভাবে ‘সালাফি সেক্যুলার’ বিশেষণটাও নাস্তিক ও সেক্যুলারদের প্রতি অপমান – অশ্রদ্ধা – ঘৃণা প্রকাশে ব্যবহৃত হয়! বামপন্থীদের মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থা ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে সাম্রাজবাদ বিরোধিতা কিংবা আমাদের দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ – আদিবাসীদের উপরে সাম্প্রদায়িক হামলা ও নিপীড়ন ইস্যুতে ক্ষমতাসীন রাজনীতির বিরোধিতার ব্যাপারে যদি আপত্তি থাকে, তাহলে সেখানে যুক্তিতর্ক হতে পারতো! কিন্তু যুক্তিতর্ক বাদ দিয়ে ‘বামাতি’ বিশেষণ ছুড়ে দেয়া, স্বপ্নে দেখা গালগল্প সেইসব কথিত ‘বামাতি’দের মুখে চড়িয়ে দিয়ে সেই ‘বামাতি’দের মৌলবাদী, ইসলামিস্ট হিসেবে উপস্থাপন করে একহাত নেয়া – এই পুরা ব্যাপারটাই আসলে গালাগালির সমপর্যায়ের! যেখানে যুক্তি থাকে ক্ষীন- সেখানেই মানুষ গলা চড়ায়, করে গলাবাজি, তখনই সবচাইতে বেশি দরকার গালিবাজির! ‘বামাতি’ বিশেষণ ব্যবহারকারীদেরও অবস্থাটা একই! অন্যদিকে, ‘সালাফি নাস্তিক’, ‘ইসলামোফোব’ – এগুলো কেবল গালিবাজিই নয়, প্রচণ্ড রকম ঘৃণাবাদী ও এই ঘৃণাটা যেহেতু মুসলিম প্রধান দেশের খুবই ছোট ও নিরীহ একটা অংশ- নাস্তিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত, সেহেতু এটা মারাত্মক বর্ণবাদীও! মডারেট মুসলিমরা (এবং কথিত প্রগতিশীল ও সেক্যুলার অংশ) ‘ইসলাম’ এর মর্যাদা রক্ষার জন্যে এই যে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণাটা ছড়াতে ভূমিকা রেখেছে, সেটাই মূলত দেশের হেফাজত ও জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোর নাস্তিক নিধনের দাবি বা কর্মসূচিতে রসদ জুগিয়ে গিয়েছে! শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মডারেট মুসলিমরা ও কথিত প্রগিতশীলদের যারাই নাস্তিকদের “সালাফি সেক্যুলার”, “ইসলামোফোব”, “উগ্র নাস্তিক” – এসব বিশেষণে অভিহিত করেছে, প্রত্যেকের হাতেই আসলে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয়, ওয়াশিকুর বাবু, নিলয় নীল, থাবা বাবাদের রক্ত লেগে আছে!
৭
“বামাতি” ও “সালাফি সেক্যুলার” – এই দুই বিশেষণ বা গালির পেছনেই যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গীবাদের উত্থান ও প্রসার কেন্দ্রিক যুক্তিতর্কের সরাসরি সম্পর্ক আছে, সেহেতু তালি বান কর্তৃক আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের ঘটনার দিকে একটু আলো ফেলা যাক! তালি বানদের এই ক্ষমতা দখলের ঘটনায় বাংলাদেশের মডারেট মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া সাধারণভাবে কি? সবাই মারাত্মক খুশী, মহা উল্লসিত! এতদিন যে মডারেট মুসলিমরা “ইসলাম শান্তির ধর্ম”, “তালি বান, আল কায়দা, আইএস, আনসার বাংলা, জেএমবি- প্রভৃতি জঙ্গীদের ইসলাম সহীহ ইসলাম না”, “ইসলাম নারীর পূর্ণ মর্যাদা দেয়”, “সহীহ ইসলাম বিধর্মী, নাস্তিক, শিয়া, কাদিয়ানিদের হত্যার অনুমতি দেয় না”, “সহীহ ইসলাম বিধর্মী নারীদের বা অন্য সেক্টের মুসলমান নারীকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে ধর্ষণের অনুমতি দেয় না”, ইত্যাদি বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছে, তারাই আজ অসংখ্য হাজারা সম্প্রদায়ের শিয়া অধিবাসীদের হত্যা করা, আফগান কবি, অভিনেতাকে হত্যা করা, নারীদের কর্মস্থল থেকে বের করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া, নারীদের ধর্ষণ করা, ভাস্কর্য শিল্প সংস্কৃতি ধ্বংস করা- তালি বান যোদ্ধাদের বীরসেনানি হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে! কথিত প্রগতিশীল, সেক্যুলার অংশ, যারা মডারেট মুসলিমদের মাঝে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার জন্যে এতদিন ধরে যে ইসলামকে মহাশান্তির ধর্ম হিসেবে প্রচার করে গেল, তারা কি এবার নিজেদের কাজের আউটপুট পর্যালোচনা করে দেখবে?
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গীদের শায়েস্তা করার জন্যে সাম্রাজ্যবাদীরা বাদে আর কোন দাওয়াই নাই ভেবে বামদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় মহাবিরক্ত ও ক্ষিপ্ত নাস্তিক বন্ধুরাও আসলে কোন শিক্ষা নিতে পারছে কি? তারা কি বুঝতে পারছে যে, যেকোন পরিবর্তন আসতে হয় ভেতর থেকে, বাইরে থেকে যত প্রবল শক্তিধরই আসুক না কেন, পরিবর্তন কোনদিনই স্থায়ি হতে পারে না! আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরে তিনমাসও লাগেনি, আফগানিস্তানের তথাকথিত নির্বাচিত পুতুল সরকারের পতন ঘটতে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তো সবার আগে তল্পি তল্পা গুটিয়ে (ও দুর্নীতি টাকার বাক্স ভর্তি করে নাকি) পালিয়ে গিয়েছে! তাহলে, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এই ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে কি করেছে? তালি বান উচ্ছেদের নামে দফায় ড্রোন বোমা ফেলে অসংখ্য মানুষ খুন, বিলিয়ন ডলার খরচ করে আফগান সৈন্যবাহিনী তৈরি, সাম্রাজ্যবাদীদের নানান বহুজাতিক কোম্পানি – করপোরেশনের ধুমায় ইনভেস্টমেন্ট আর মুনাফা, চরম দুর্নীতিবাজ ও পরম অনুগত একটা পুতুল সরকার পালা – এসবের কোনটা কোন কাজে লেগেছে? হ্যা, বড় বড় শহরগুলোতে কিছু উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে, শহরাঞ্চলের নারীরা কিছু স্বাধীনতা ভোগ করেছে, স্কুল – কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পেরেছে; কিন্তু ভিতর থেকে এসবের কোন কিছুই কি স্থায়ি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে পেরেছে? যে তালি বানের জুজু দেখিয়ে ২০ টা বছর আফগানিস্তানকে পরাধীন করে রাখা হলো, সেই তালি বান এক তুড়িতে সবকিছু দখল করে ফেললো- তাও আবার মার্কিন সরকারের সাথে শলা পরামর্শ করে, রীতিমত চুক্তি করে! ২০ বছরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আফগানিস্তানের তাহলে কোন উপকারটা করলো, ২০ বছরের জন্যে পিছিয়ে দেয়া ছাড়া, মেরুদণ্ডহীন – পলায়নপর একগুচ্ছ আপার ক্লাস ও মিডল ক্লাস মানুষ তৈরি করা ছাড়া? আজকে আফগান জনগণকে যেভাবে নিজেদের লড়াইটা নিজেদেরই লড়তে হবে বলে মার্কিন বাহিনী চলে আসলো, সেটা ২০ বছর আগেই যদি করা হতো, তাহলে কি হতো? এত সংখ্যক ভীরু পলায়নপর মানুষ না পালানোর বদলে ফাইট ব্যাক করার চেস্টা করতো! কুর্দি নারীরা যেভাবে আইএস এর বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে লড়াই করছে, আফগান নারী-পুরুষরা তালিবানের বিরুদ্ধে সেই লড়াইটা ২০ বছর আগেই শুরু করতে পারতো, তাই নয় কি?
৮
দুনিয়াজুড়ে আজ ধর্মীয় জঙ্গীবাদের যে উত্থান, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থী, সেক্যুলার, প্রগতিশীল, নাস্তিক, মুক্তমনাদের শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য! এই লড়াইয়ে যে যার স্থান থেকে, যুক্তি বুদ্ধি, এক্টিভিজম, মাঠে ময়দানের সংগ্রাম দিয়ে ভূমিকা রাখবে, সেই আলাদা আলাদা ভূমিকাই এক হয়ে জঙ্গীবাদ উত্থান-উৎপাদনের ভূমিকে অনুর্বর করতে সাহায্য করবে! অথচ, আমাদের একদল নাস্তিক-সেক্যুলাররা বামপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-প্রচারণায় লিপ্ত হয়ে “বামাতি” গালি দিচ্ছে, অন্যদিকে আরেকদল কথিত প্রগতিশীল-সেক্যুলাররা নাস্তিকদের “সালাফি নাস্তিক”, “ইসলামোফোব” -এসব বলে গালাগালি করছে! এভাবে, বস্তুত নিজদের শক্তিই ক্ষয় করছে, আর সুযোগটা পেয়ে যাচ্ছে – জঙ্গীবাদীরা, সালাফিরা!
৯
এরপরেও যদি আপনারা মনে করেন, “বামাতি” বিশেষণ – “সালাফি সেক্যুলার” বিশেষণ খুবই এপ্রোপিয়েট বিশেষণ, এ রকম ঘৃণাবাদী বিশেষণ আপনারা পরিত্যাগ করবেন না; তাহলে –
- আমি একজন বামাতি। কেননা আমি মনে করি, আজকের যুগে সাধারণ মানুষের উপরে হাজার বছরের পুরাতন ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রভাব খুবই কম থাকে, কিছু বিশ্বাস আর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে বর্তমান সময়ের, স্থানের, সংস্কৃতির নীতি রীতি, নৈতিকতা প্রভৃতি বেশি চালিত করে, যতক্ষণ না রাজনীতি এসে সেখানে ইন্টারফেয়ার না করে! ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে তালি বান, আইএস, আল কায়দার উত্থানের পেছনে সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির ভূমিকা প্রধানভাবে দেখি, একইভাবে বাংলাদেশেও হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসীদের উপরে যে নির্যাতন, নিপীড়ন – এর পেছনেও আমাদের ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি ও ক্ষমতার চর্চা, সম্পত্তি গ্রাস- এসবকেই প্রধানভাবে দেখি!
- আমি একজন সালাফি সেক্যুলার। কেননা, আমি মনে করি – কোরআন, হাদীসে লিটারালি যে ঘৃণাবাদী ও নারীবিদ্বেষী কথাগুলো আছে, সেগুলো আছে বলেই – ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে নানাভাবে উসকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে, ধর্মে ধর্মে ঘৃণা ছড়ানো সম্ভব হচ্ছে! ধর্ম আছে বলেই আগের কালে রাজা-বাদশারা, পুরোহিত তন্ত্র, চার্চ ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের উপরে ছড়ি ঘুরাতে পেরেছে, আজকেও ধর্মের সেই লিটারাল বক্তব্যকেই ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা, সাম্রাজ্যবাদীরা, সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের অত্যাচার, নিপীড়নের কাজে ইচ্ছেমত ও সুবিধেমত ব্যবহার করতে পারে! কনটেক্সটের আলোচনাটা আপেক্ষিক, যুগে যুগে একেকজন একেকভাবে কনটেক্সটের ব্যাখ্যা দিয়েছে বলেই- আজ ইসলামের এত মাজহাব, এত সেক্ট, এত বিভক্তি! সবাই নিজেদের ব্যাখ্যাকৃত কনটেক্সটকেই সহীহ মনে করে! কেবলমাত্র সালাফিরা বাকি সব ব্যাখ্যাকে অসহীহ মনে করে (এবং মডারেট মুসলিমরা ইসলামের মর্যাদা রক্ষার তাগিদে উপরে উপরে সালাফিদের লিটারাল ব্যাখ্যাকে অসহীহ মনে করে)! ফলে, আমি কনটেক্সটের আলাপের ধুয়া তুলে কোরআন-হাদীসের লিটারাল ব্যাখ্যাকে আড়াল করার প্রয়োজন দেখি না, বরং মনে করি- যেকোন কনটেকচুয়াল আলাপের চাইতেও লিটারালি কোরআনের আয়াতে ও হাদীসে যা যা বলা আছে, তা ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসী মুসল্লিকে অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারে! তাই আমি মনে করি, এভাবে লুকাছাপা করে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করে মডারেট মুসলিমদের মন যুগিয়ে কেউ চলতে চাইলে চলতে পারে, কিন্তু কোরআন ও হাদীসের সেসব লিটারাল ঘৃণাবাদী ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যকে মোকাবেলা করে সেসবের বিরুদ্ধে মুসল্লিদের মাঝে শক্ত নৈতিক অবস্থান গড়ে তোলার কাজটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ!
এখন আসুন কথা বলুন, আমার সমস্যা কোথায়, আমার ‘বামাতি’ হওয়ায় বা ‘সালাফি সেক্যুলার’ হওয়ায় আপনার অসুবিধাটা ঠিক কোন জায়গায়?
আপনার মতামত জানানঃ