নারী নির্যাতন, ভ্রূণ হত্যা, শিশু বিবাহ, ধর্ষণ – এগুলো অহরহ হয়ে আসছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। আজও নারীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়, বিধবাদের রাখা হয় পূজার কাজ থেকে দূরে। এমন সমাজে ধর্মীয় পেশায় নারীর অংশগ্রহন করতে একটা জয়ই বটে।
করোনার জন্য কোনো উৎসবই আগের মত প্রাণ খুলে করা হয়ে উঠছে না। সামাজিক দূরত্ব, বাঁধাধরা লোকসংখ্যা সবকিছু মিলে উৎসবগুলো হয়ে গেছে সাদামাটা। প্রতিবছর দুর্গাপূজা ঘিরে যে উৎসবের আমেজ থাকে এবার করোনার কারণে সে চিত্র নেই। তবে আগের আমেজ ফেরাতে চেষ্টার কমতি নেই ভারতীয় আয়োজকদের মধ্যে। তেমন চেষ্টাই করে যাচ্ছে ক্লাবগুলো। তারই অংশ হিসেবে কলকাতার ৬৬ পল্লিতে এবার পূজার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন নারী পুরোহিত।
চার নারী পুরোহিত থাকবেন এবারের আয়োজনে। সবরকম প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সেরেও ফেলেছেন তারা। দুর্গাপূজা সংশ্লিষ্ট কাজে নারীদের অংশ নতুন কোনো কথা না, পূজা পরিচালনা থেকে শুরু করে থিম সাজানো, ঢাক বাজানো সব কিছুতেই নারীরা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু নারী পুরোহিতদের সেভাবে দেখা যায়নি।
সেটারই ব্যতিক্রম ঘটছে এবারের ৬৬ পল্লির মণ্ডপে। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, কলকাতায় দুর্গাপুজার ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে আর ঘটেনি।
যে চার নারী পুরোহিত এবারের পৌরহিত্য করবেন তারা হলেন- নন্দিনী, সেমন্তী, রুমা, পৌলমী। বিয়ে বা গৃহপ্রবেশের মতো অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিয়েছেন আগে। তারা বলছেন, শুরুর দিকে পথচলাটা সহজ ছিল না। সমস্ত বাঁধা কাটিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন নারী পুরোহিতরা।
বিগত কয়েক বছর ধরে নন্দিনী, সেমন্তী, রুমা, পৌলমীদের বিয়ে থেকে গৃহপ্রবেশের মতো অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করতে দেখা গেছে। তারা অবশ্য জানিয়েছিলেন, শুরুর দিকে পথচলাটা মোটেই সহজ ছিল না তাদের কাছে। সমস্ত বাঁধা কাটিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন এই নারী পুরোহিতরা।
৬৬ পল্লির পুজো উদ্যোক্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়ের বলেন, স্রোতের বিপরীতে চললেও প্রথা ভাঙায় বিশ্বাসী নন তারা। তবে পুরুষদের পাশে মহিলারাও এসে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন তিনি। পুরোহিত দর্পণ, দেবী পুরাণ, বৃহত্ নান্দিকেশ্বর পুরাণ, কালিকাপুরাণ ঘেঁটে ফেলেছেন মহিলা পুরোহিতরা। বাড়তি হিসেবে, পুজোয় মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে যুক্ত হবে সঙ্গীতের সুর। ৬৬ পল্লি জোরকদমে নিচ্ছে সেই প্রস্তুতি।
তবে ভারতের প্রথম দু’জন নারী পুরোহিত হলেন – লক্ষ্মী আর ইন্দিরা৷ পুরোহিত হওয়ার জন্য তাদের প্রায় চার মাস প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল৷ ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষাপটে এই দুই নারীকে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ – ঘটনাটিকে ছোটখাট একটা বিপ্লবের তুলনায় কোনো অংশে কম মনে হয়নি তখন৷
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের প্রথম হিন্দু নারী পুরোহিত হিসেবে বিয়ে পড়িয়েছেন নন্দীনি ভৌমিক। এমনকি এক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক কন্যাদানের আচারটিও পালন করতে দেননি তিনি। নন্দিনী ভৌমিক বলেন, আমি সমাজ থেকে পিতৃতান্ত্রিক মনোভঙ্গি দূর করার জন্য এই কাজ করছি। পিতৃতন্ত্রে কনের বাবা-মা অনেকটা ভোগ্য পণ্যের মতো করেই তাদের কন্যাকে দান করেন। এই ঘটনাকে নারীর ক্ষমতায়নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আনভিতা জনার্দনন এবং আরকা ভট্টাচার্যের এই বিয়ে পড়ানো হয়।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ