ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিন আগে দিল্লির মিছিলে ‘ভারতে থাকতে হলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে’ স্লোগানের পর ভারতে এবার মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এলো আরেক ঘটনায়। এক মুসলিম ব্যক্তিকে তার ছোট্ট মেয়ের সামনে শহরের রাস্তাজুড়ে নির্যাতন করা হয়েছে এবং তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়েছে। ছোট্ট মেয়েটির কান্নায়ও বাবাকে নির্যাতন থেকে দমেনি পাষণ্ডরা। এমনকি পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পরও নির্যাতন করা হয়েছে ৪৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিটিকে। খবর এনডিটিভি
ঘটনাটি বুধবার ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। স্থানীয়দের করা ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট শিশুটি তার বাবাকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং বাবাকে আর না মারতে আক্রমণকারীদের কাছে অনুরোধ করছে।
ভিডিওতে এটাও দেখা যায়, পুলিশ ওই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয়ার সময়ও আক্রমণকারীরা তাকে মারধর করতে থাকে।
বুধবার একটি মোড়ে সমাবেশ করছিল কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল। তাদের অভিযোগ ছিল, মুসলমানরা একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত করে তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। বৈঠকটি শেষ হওয়ার পরপরই সমাবেশস্থলের ৫০ গজের মধ্যেই মারধরের ঘটনাটি ঘটায় তারা।
এদিকে এক বিবৃতিতে কানপুর পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মারধরের শিকার ওই ব্যক্তি বিয়ের ব্যান্ড পরিচালনা করা স্থানীয় এক ব্যক্তি, তার ছেলে ও নাম উল্লেখ না করে আরো ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে বজরং দলের কারো নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে কিনা পুলিশ তা পরিষ্কার করেনি।
স্থানীয়দের করা ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট শিশুটি তার বাবাকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং বাবাকে আর না মারতে আক্রমণকারীদের কাছে অনুরোধ করছে।
নির্যাতনের শিকার পেশায় রিকশা ড্রাইভার ওই ব্যক্তি মামলার অভিযোগে বলেন, ‘আমি বিকেল ৩টার দিকে আমার ব্যাটারিচালিত রিকশাটি চালাচ্ছিলাম। তখনই তারা আমাকে হেনস্থা ও নির্যাতন করা শুরু করে এবং পরিবারসহ আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আমি পুলিশী হস্তক্ষেপে বাঁচতে পারি।’
জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটি একটি পরিবারের আত্মীয়, যাদের পার্শ্ববর্তী একটি হিন্দু পরিবারের সাথে আইনি দ্বন্দ্বে রয়েছে। বিবদমান পরিবার দুটি একে অপরের বিপক্ষে মামলা করেছে।
মুসলিম পরিবারটি প্রথমে নির্যাতন ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করে। পরে হিন্দু পরিবারটি ‘এক নারীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা’র অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করে।
সম্প্রতি বজরং দল বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে এবং মুসলিম পরিবারটির বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ তোলে।
এর আগে গত রোববার সংসদ ভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে যন্তরমন্তরের কাছে একটি বিক্ষোভ মিছিলে ‘ভারতে থাকতে হলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে’ তোলা হয়েছে এমন ‘সাম্প্রদায়িক’ স্লোগান। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও দিল্লি বিজেপির সাবেক মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায় এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মিছিলে স্লোগান দেয়া হচ্ছে ‘হিন্দুস্তান মে রেহনা হোগা, জয় শ্রী রাম কেহনা হোগা’ অর্থাৎ ‘ভারতে থাকতে হলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে।’
এদিকে সম্প্রতি ফেডারেল এজেন্সির দ্য ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের বার্ষিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হচ্ছে। কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহ্য করছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ভারতে ক্রমাগত নিচের দিকে যাচ্ছে। দেশটিতে হিন্দুত্ববাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।’
গত বছর নয়াদিল্লিতে মারাত্মক দাঙ্গার সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও পুলিশের নির্যাতনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতিগুলি প্রচার করেছে যার ফলে নিয়মতান্ত্রিক, চলমান এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হয়েছে। এ ছাড়াও মোদি সরকারের পরিচালিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইনের ফলে ভারতের মুসলিমরা নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ভারতবর্ষের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশসহ বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে আন্তঃবিশ্বাস বিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার ভিন্নমত দমনের চেষ্টা করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৫৪
আপনার মতামত জানানঃ