আজ ৯ আগস্ট জ্বালানি দিবসে সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এর সন্ধান পায় যা থেকে আগামী ১২-১৩ বছর গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এর আর্থিক মূল্য যদি এখনকার সময়ে যাচাই করা হয় তাহলে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার মতো হবে।
আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ের ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের দিনে সবচেয়ে বড় সুখবর হলো জকিগঞ্জে নতুন করে একটি গ্যাসফিল্ড বাপেক্সের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে। এই গ্যাসফিল্ড থেকে প্রতিদিন আমরা প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাব।’
সিলেটের জকিগঞ্জের আনন্দপুরে আবিষ্কৃত ক্ষেত্রে গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্স।
এ গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ায় বাপেক্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ক্ষেত্রটিতে মজুত আছে ৬৮ বিলিয়ন (ছয় হাজার ৮০০ কোটি) ঘনফুট গ্যাস। আর দিনে ১০ মিলিয়ন (এক কোটি) ঘনফুটের মতো গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। আগামী ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
এটাকে বাপেক্সের ‘সাকসেস স্টোরি’ আখ্যা দিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, বাপেক্স এখন সম্ভাবনার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। তারা আধুনিক চিন্তাভাবনা করছে। সিলেট গ্যাসফিল্ডে আরও ১০টি ড্রিলিংয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সার্ভে ও নতুন করে ড্রিলিংয়ের জন্য নতুনভাবে কাজ শুরু করছে।
এখানে পাইপলাইন নির্মাণ হবে বলে জানায় প্রতিমন্ত্রী। পাইপলাইন তৈরী হতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। জকিগঞ্জের আরও তিনটি স্থানে গ্যাসের সন্ধানে কাজ চলছে। সেখানেও সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশে এ নিয়ে মোট ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুতের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ। আরও ৬ টিসিএফ সম্ভাব্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসাবে মজুদ রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ। সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফর মতো।
নতুন সন্ধান পাওয়া গ্যাসক্ষেত্রটি আবাসিক খাতে গ্যাস দেয়া হবে না। বাড়ির চেয়ে শিল্পকে গ্যাস দিতে এগিয়ে রাখছে সরকার। শিল্প এখন তাদের মেইন পারপাস।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী এক জাতীয় দৈনিকককে বলেন, ‘এটি বাপেক্সের অষ্টম সাফল্য৷ এই কূপে চারটি স্তরে পরীক্ষা করে একটি স্তরে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া গেছে৷
‘মাটির ২৮৭০ থেকে ২৮৯০ মিটার গভীরে এই গ্যাস স্তর অবস্থিত৷ এই কূপ খননে বাজেট ছিল ৮৬ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি টাকা।’
খনির মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় থাকবে বাপেক্স। ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে থাকবে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।
জুন মাসে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর ১৫ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে অনুসন্ধান কূপে সফলতার সঙ্গে ড্রিল স্টিস টেস্ট (ডিএসটি) বা শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয় বাপেক্স।
অনুসন্ধানে কূপটির ভেতর ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপ পাওয়া গেছে। আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের বেশি পিএসআই। এখন প্রথম স্তরের পরীক্ষা চলছে। ক্ষেত্রটির চারটি স্তরেই গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা যায়।
ভারত সীমান্তঘেঁষা নতুন এই গ্যাসক্ষেত্র সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে এর দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার।
১১৩টি কূপ দিয়ে প্রতি বছরে উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফর মতো। এর মধ্যে দেশীয় কোম্পানির ৭০টি কূপের (দৈনিক) ১ হাজার ১৪৫ এমএমসিএফডি, আইওসির ৪৫টি কূপের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৬১৫ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। দৈনিক কমবেশি ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৮০৭
আপনার মতামত জানানঃ