বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই বিশ্বে টিকা বৈষম্য নিয়ে এক রকম আহাজারি করে আসছেন। বরাবরই বলে আসছেন, ধনী দেশগুলিই নিজেদের হস্তগত করে রেখেছে করোনা টিকা। যার ফলে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশগুলি তাদের চাহিদামতো টিকা পাচ্ছে না। টিকা বৈষম্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই যখন টিকার সংকট চলছে এমনি সময়ে জানা গেল যুক্তরাষ্ট্রে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টিকা।
যুক্তরাষ্ট্রে ফের যখন কভিড-১৯ এর বিস্তার বাড়তে শুরু করেছে, ঠিক এমন সময় দেশটিতে এর বিপুল পরিমাণ টিকা নষ্ট হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ডিসেম্বরে দেশটিতে টিকাদান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০টি রাজ্যে ১০ লাখের বেশি ডোজ টিকা নষ্ট হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, টিকা দেওয়ার চাহিদা কমে যাওয়াতেই মূল ক্ষতিটা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, জর্জিয়ায় সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকা ধ্বংস করা হয়েছে। নিউজার্সিতে নষ্ট হওয়া ৫৩ হাজারের বেশি ডোজের মধ্যে শুধু জুনেই নষ্ট হয়েছে ২০ হাজার ডোজ টিকা। এর আগে এপ্রিলে এ রাজ্যে নষ্ট করা হয়েছিল ৪ হাজার ডোজ।
এ ছাড়া ওহিওতে ৩ লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা ব্যবহার অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা। মেরিল্যান্ডেও প্রায় ৫০ হাজার ডোজ টিকা অব্যবহৃত রয়েছে।
কর্মকর্তারা টিকা অপচয়ের বেশকিছু কারণও জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভেঙে যাওয়া, সংরক্ষণ ও পরিবহন সমস্যা, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে টিকা না নেওয়ায় অনেক টিকা ব্যবহার করা যায়নি।
কেন্দ্র থেকে রাজ্যগুলোতে যত পরিমাণ টিকা পাঠানো হয়েছিল তার তথ্য এই জরিপের তথ্যে নেই। নষ্ট হওয়া আরও টিকার তথ্য হিসাবে আসেনি।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন টিকা নষ্টের বিষয়টি নজরদারি করলেও পুরো দেশে কি পরিমাণ টিকা নষ্ট হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি।
অ্যাসোসিয়েশন অব স্টেট অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল হেলফ অফিসিয়ালসের মেডিকেল অফিসার মার্কাস প্লেসিয়া বলেন, “প্রথমদিকে এটি এমন একটি সমস্যা ছিল যখন মানুষ চেয়েও (টিকা) পায়নি। আর এখন সঙ্কট হচ্ছে এটি যথেষ্ট থাকার পরও মানুষ নিতে চাইছে না।”
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি। বিশেষ করে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। গত রোববার এবিসি টেলিভিশনের দিস উইক শোতে অংশ নিয়ে নিজের এমন উদ্বেগের কথা জানান বাইডেন প্রশাসনের এই শীর্ষ চিকিৎসা উপদেষ্টা।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ জন্য বিশেষ করে এখনো যারা টিকা নেয়নি তাদের দোষারোপ করেন ড. ফাউচি।
কিছু গবেষক আগস্টের শেষ দিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে দৈনিক এক লাখ ৪০ হাজার থেকে তিন লক্ষাধিক মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, যারা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছে, তাদের মাধ্যমেও এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে। মার্কিন সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি গত সপ্তাহে একটি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের কোনো কোনো অংশে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ফলে ওই সব এলাকায় যারা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন, তাদেরও মাস্ক পরা উচিত।
এদিকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। তবে টিকার বিতরণ ব্যবস্থাপনায় দেখা গেছে বড় ধরনের বৈষম্য। বেশির ভাগ টিকাই বাগিয়ে নিয়েছে ধনী দেশগুলো।
কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশগুলো বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
বিশ্ব সংস্থাটির প্রধান গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘বিশ্বে এখন পর্যন্ত টিকার ৯০ কোটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এর ৮১ শতাংশ ডোজ দেয়া হয়েছে ধনী ও উন্নত দেশগুলোকে। দরিদ্র দেশগুলো পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ডোজ।’
বিশ্বব্যাপী টিকা বণ্টনে এমন বৈষম্যের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। ধনী দেশে জমা পড়ে থাকা টিকার অতিরিক্ত ডোজ নিম্ন আয়ের দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের শরীরে প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ