করোনাভাইরাস মহামারীতে সারা বিশ্বে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একেক সময়ে এ ভাইরাসের একেকটি ধরন তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। মহামারি শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তবুও মহামারীতে প্রবাসে থাকাকেই বেছে নিতে চান বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বীমা প্রতিষ্ঠান আটনার এই বিষয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। ৮-১৬ মে চারটি দেশে বসবাসকারী প্রায় এক হাজার প্রবাসীর ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এসব প্রবাসী কোভিডের কারণে নানা দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীরা যেসব দেশে বসবাস করছেন, তারা তাদের স্বাগতিক দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী প্রবাসীদের ৮৭ শতাংশ তাদের প্রবাস জীবন এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী প্রবাসীদের ৮৮ শতাংশ তাদের প্রবাস জীবন এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ দুই দেশেই কভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ১০ লাখে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি ১০ লাখে ১৯৪ জন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জরিপে দেখা যায়, সিঙ্গাপুরে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর ঘটনা মাত্র ছয়টি। মহামারী শনাক্তকারী ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যে এমন চিত্র দেখা যায়।
জরিপে আরও দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও মেক্সিকোতে বসবাসকারী প্রবাসীদের ৭৫ শতাংশই মহামারী-পরবর্তী সময়ে এ দেশগুলোতেই বসবাস করতে চান।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও মেক্সিকোতে বসবাসকারী প্রবাসীদের ৭৫ শতাংশই মহামারী-পরবর্তী সময়ে এ দেশগুলোতেই বসবাস করতে চান।
জার্মানি ও মেক্সিকোতে দেখা গেছে এখানকার প্রবাসীরা খুব বাজেভাবেই কোভিডের প্রভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৯ শতাংশ জার্মান প্রবাসী দেশটিতে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে মেক্সিকোর ৭০ শতাংশ প্রবাসী এ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। জার্মানি ও মেক্সিকো দুই দেশেই প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। জার্মানিতে প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর হার ১ হাজার ৯৬ জন ও মেক্সিকোতে এ হার ১ হাজার ৮৪১ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বেশ ধীরগতিতেই কোভিড টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছিল জার্মানি।
আটনা ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপীয় অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক ডেমিয়ান লেনিহান জানান, এটি একটি কঠিন ও অনিশ্চিত সময়, এখন মনোবলই আমাদের প্রধান শক্তি। বিশেষ করে যারা বাইরের দেশে নিজেদের স্থায়ী করা ও জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য কঠিন মনোবলের প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, জীবনযাপনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার আশা করছে সবাই। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় নিরাপদ অনুভব করা, সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াই সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আপনি পৃথিবীর যেখানেই বসবাস করেন এটিই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।
এসব প্রবাসী তাদের স্বাগতিক দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার গুণগত মান ও স্বাস্থ্যবীমার মানের ওপর নির্ভর করে তাদের বর্তমান জীবনযাপন চালিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মূলত স্বাস্থ্যসেবার কথা বিবেচনা করেই তারা থাকা বা অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। জরিপে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ প্রবাসী মহামারীকালীন স্বাস্থ্যসেবাকেই মূল গুরুত্বের দিক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৩৮ শতাংশ প্রবাসী জানান, তাদের নিজের দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান আরো উন্নত ও সহজলভ্য হলে তারা ফেরত যাওয়ার চিন্তা করে দেখবেন। ৩২ শতাংশ প্রবাসী নিজের দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সচেতন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে এ কারণে তারা নিজের দেশে ফেরত যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ় নয় বলে জানান।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি হারিয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরা শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য মতে, গত বছরের এপ্রিল থেকে বিগত এক বছরে চাকরি হারানোসহ নানা কারণে দেশে ফিরেছেন প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী কর্মী। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিদেশফেরত এসব শ্রমিকের ৫৩ শতাংশই দিনমজুরিসহ ছোট কোনো কাজে যুক্ত হয়ে জীবিকা উপার্জনের চেষ্টা করছেন। বাকি ৪৭ শতাংশের আয়ের কোনো পথ নেই।
তবে দেশে ফেরা কর্মীর সংখ্যা নিয়ে সঠিক তথ্য নেই বলে দাবি করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরে মানবেতর জীবন যাপন করা কর্মীর সংখ্যা হয়তো বেশি নয়, তার পরও আমরা বিষয়টি স্বীকার করছি। আর আমরা তাদের পাশে আছি। যারা দুস্থ তাদের এ সময় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এটা ঋণ সুবিধা হতে পারে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ