করোনার থাবায় বাংলাদেশের সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চলছে এখন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপে দিশাহারা হয়ে পড়ছে দেশ। দিনদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গোটা জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২ হাজার ২৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৬৫৮ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭৭৭ জন আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৭৪৭ জনই আছে রাজধানীর ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। আর বাকি ৩০ রোগী ভর্তি আছে অন্যান্য জেলায়।
ডেঙ্গু সন্দেহে মারা যাওয়া চারজন রোগীর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেনি আইইডিসিআর।
গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দৈনিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল ১০০ জন। জুন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ২৭২ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
পানি জমে থাকার কারণে রাজধানীর প্রধান প্রধান বাস টার্মিনাল ও ডিপোগুলো ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার আদর্শ প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠছে। টার্মিনালগুলোর আশেপাশে বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ প্রচুর প্লাস্টিকের ব্যারেলও পড়ে আছে। এগুলো দিনের পর দিন পরিষ্কার না করায় এডিসের লার্ভা বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।
সম্প্রতি সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালীর বাস টার্মিনাল, তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ও গাবতলীর বিআরটিসি বাস ডিপোতে গিয়ে এক জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদকরা অসংখ্য পরিত্যক্ত বস্তুতে পানি জমে থাকতে দেখতে পান। এগুলোর কিছু কিছুতে মশার লার্ভাও দেখতে পান তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার ওই দৈনিককে বলেন, ‘ফেলে দেওয়া টায়ার এডিস মশার প্রজননের অন্যতম প্রধান জায়গা।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চললেও ২০১৯ সালে ঢাকায় ব্যাপকভাবে এ রোগ ছড়ায়। সে সময় সরকারি হিসাবে দেশে লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত ও দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর সমালোচনার মুখে দুই বছর ঢাকায় মশকনিধনে ব্যাপক কার্যক্রম চালায় দুই সিটি করপোরেশন। এবার করোনা মহামারির মধ্যে আবার সেই ডেঙ্গু নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে, সব হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ভারাক্রান্ত অবস্থায় আছে। আইসিইউ শয্যা পাওয়া দুর্লভ হয়ে উঠেছে অথবা একেবারে নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে, বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ডও করোনা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই ডেঙ্গু সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিকে প্রতিহত করতে হবে। শুধুমাত্র সেরোটাইপ-৩ ভ্যারিয়েন্টটি বেশি বিপজ্জনক বলে নয়, বরং যেসব রোগী একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে। এই দুটি ভাইরাসের নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতি পরস্পর বিপরীত।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩৪৭
আপনার মতামত জানানঃ