এবার দেশের একটি ল্যাবে ছড়িয়ে পড়ল করোনা ভাইরাস। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরায়। গত মঙ্গলবার থেকে ল্যাবের কার্যক্রম তিন দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাইরাসমুক্ত করা গেলে আগামী শনিবার থেকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাব ও ল্যাবের দেয়ালেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় করোনা পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার নমুনা পরীক্ষার সময় পিসিআর ল্যাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ল্যাবের সব নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ল্যাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সন্দেহে ল্যাবের দেয়াল থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হলে পজিটিভ আসে। পরে ল্যাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, ‘ল্যাবটি ভাইরাসমুক্ত করার কাজ চলছে। আগামী শনিবার থেকে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার চেষ্টা করা হবে। ফল সন্তোষজনক হলে ল্যাব চালু রাখা হবে। সন্তোষজনক না হলে ল্যাবটি আরও দুই দিন বন্ধ রাখা হবে।’
এদিকে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ল্যাবের ফ্রিজে জমে থাকা পাঁচ শতাধিক নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজের (খুমেক) পিসিআর ল্যাব কর্তৃপক্ষ এসব নমুনা পরীক্ষা করতে অস্বীকার করায় ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার ল্যাবে জমে থাকা নড়াইল ও মাগুরার বিপুল পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করে জট কমিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মুরশিদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ল্যাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ল্যাবের ফ্রিজে জমে থাকা নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে’।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাস ধরে সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা ও নড়াইলের করোনা পরীক্ষার একমাত্র ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব। ল্যাবে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিদিন দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গতকাল ২৮ জুলাইয়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনার উপসর্গ আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৬১১। তাদের মধ্যে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৫২৭ জন এবং করোনায় মারা গেছেন ৮৪ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৮ দিনে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৭৮ জন এবং করোনায় ১০ জন। জেলার পিসিআর ল্যাবের মেশিন দূষিত থাকায় নমুনা পরীক্ষা রোববার থেকে বন্ধ আছে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত জানান, জেলায় করোনার উপসর্গ নিতে মৃত্যু কমানো যাচ্ছে না। মানুষ ইচ্ছেমতো ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। ফলে বিধিনিষেধের সুফল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় জুতা, চশমা, শাড়ি–কাপড়, ফুল, কসমেটিকস, তৈরি পোশাক, মুদি, যন্ত্রাংশের দোকান, চা–স্টলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশ এলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আবার চলে গেলে দোকান খোলা হচ্ছে।
এ চিত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর। পাড়ামহল্লার সড়কগুলোতে কঠোর বিধিনিষেধের লেশমাত্র নেই। আজ শুধু জেলা শহরের নিউমার্কেট মোড় দুজন এবং ইটেগাছা মোড়ে একজন পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহরের পুলিশ কম থাকার কথা নয়। দায়িত্ব ভাগ করা থাকে পুলিশের। কাগজপত্র না থাকলে পুলিশ গাড়ি আটক করতে পারে। মোটরসাইকেল কিংবা মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান— এসব আটক করলে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের তদবিরের শেষ থাকে না।
মানুষ সচেতন না হলে কোনো কিছুই সফল কার যায় না। এরপরও পুলিশ কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি দেখবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ