বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি পাঁচ জন শিশুর মধ্যে একজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পাওয়া গেছে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হিসাব পাওয়া গেছে।
শিশু হাসপাতালের সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ে মোট ৫৩৩টি শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে এই হাসপাতালে। তাদের নমুনা পরীক্ষা করে ১১০টি শিশুর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে, যা মোট শিশুর ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের উপসর্গ ছিলনা।
এর আগে, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) ও রাজধানীর শিশু হাসপাতালের এক যৌথ গবেষণাতেও শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত সেই গবেষণার অধীনে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ২৯ মার্চ থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত যে নবজাতকরা চিকিৎসা নেয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের জন্য তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ৮৩টি নবজাতকের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬টির শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এদের সর্বোচ্চ বয়স ছিল আট দিন। করোনা সংক্রমিত ২৩টি নবজাতকের মধ্যে ১২টি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল, আট জন মারা যায়, তিন জন এখনো চিকিৎসাধীন, বাকি তিন জন চিকিৎসা না নিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করেছিল।
সংক্রমণ বেড়েছে চট্টগ্রামে
ওদিকে, চট্টগ্রামে এক সপ্তাহে করোনা শনাক্তের হার প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুমাস আগেও শনাক্তের হার ছিল ১০ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু গত কয়েকদিন তা পৌঁছেছে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে রোগী বাড়ছে হাসপাতালগুলোতেও। সরকারি-বেসরকারি মিলে ৮টি হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যার অর্ধেকই এখন রোগীতে পূর্ণ।
২৪ ঘণ্টার হিসাব
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২১ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৪ ও নারী ৭ জন। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয় হাজার ২৭৫ জনে।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা-বিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মঙ্গলবার দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়, যা গত ৫৭ দিনে সর্বোচ্চ। আজ সে সংখ্যা ফের অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭টি ল্যাবরেটরিতে ১৫ হাজার ৫৯৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ১৬ হাজার ৪৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ২৫ লাখ ৮৯ হাজার ৪২১টি। ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয় আরও দুই হাজার ১১১ জন। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল চার লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৫ জনে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮৯৩ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।
করোনায় মৃত মোট ৬ হাজার ২৭৫ জনের মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৮২৭ (৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ) এবং নারী এক হাজার ৪৪৮ জন (২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ)।
করোনায় মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২১ জনের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রামে তিন, রাজশাহীতে এক, খুলনা দুই, বরিশালে এক এবং রংপুর বিভাগে একজন।
সূত্র : পার্সটুডে
আপনার মতামত জানানঃ