সদ্যই ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদে দায়িত্ব পেয়েছেন বিজেপি এমপি নিশীথ প্রামাণিক। তবে তিনি আদতে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, এই অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। এ প্রসঙ্গে আসামের কংগ্রেস এমপি রিপুন বোরা খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন, নিশীথ প্রামাণিক বাংলাদেশের লোক এবং তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে পার্লামেন্টে যে নথি পেশ করেছেন সেটাও নাকি জাল! যদিও এখন অব্দি অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
কংগ্রেসের অভিযোগ
নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে রাজ্যসভার এমপি রিপুন বোরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে কোচবিহারের এমপি তথা ভারতের নতুন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক না কি আসলে বাংলাদেশের গাইবান্ধার লোক।
ওই রিপোর্টগুলোতে বলা হয়েছে, গাইবান্ধা জেলার পলাশপুর থানার আওতায় হরিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। আর যথারীতি বাংলাদেশের নাগরিকও ছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, বছর কয়েক আগে গাইবান্ধা থেকে নিশীথ প্রামাণিক ভারতে আসেন একটি কম্পিউটার কোর্স করতে। কিন্তু কোর্সের শেষে ডিগ্রি পাওয়ার পরও তিনি না কি আর বাংলাদেশে ফিরে যাননি।
পাকাপাকিভাবে ভারতেই রয়ে গিয়ে নানা রকম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে ভারতের রাজনীতিতে তার প্রবেশ তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরেই। যদিও দেশে ২০১৯ এর নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি কোচবিহার থেকে এমপি-ও নির্বাচিত হন।
তিনি আরও দাবি করেছেন, যে নথি দেখিয়ে নিজেকে কোচবিহারের বাসিন্দা বলে নিশীথ দাবি করেছেন তা ভুয়া। এই নথি জালিয়াতি করে তৈরি বলেও অভিযোগ রিপুনের।
নিশীথ প্রামাণিককে নিয়ে বিতর্ক
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই নিশীথ প্রামাণিককে নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। চোরাকারবার কিংবা সীমান্তে পাচারের মতো কাজকর্মেও তার যোগাযোগ ছিল বলে গণমাধ্যমে বহু খবর বেরিয়েছে।
কিন্তু কোচবিহার এলাকায় তার দাপট, জনপ্রিয়তা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল সাংঘাতিক। যে কারণে তৃণমূলেও তার খুব দ্রুত উত্থান হয়েছিল, আর বিজেপিতে যোগ দেয়ার বছর দুয়েকের মধ্যেই তিনি মোদির ক্যাবিনেটে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে গেছেন।
কিন্তু তিনি আসলে বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন এবং ভুয়া প্রমাণ দিয়ে নিজের জন্ম ভারতে বলে দাবি করেছেন, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশীথ প্রামাণিককে যে যথেষ্ঠ বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কংগ্রেস এবং তৃণমূল দুটো দলই এর মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই ইস্যুতে শেষ দেখে ছাড়বে।
তৃণমূলের বক্তব্য
এদিকে, এই অভিযোগ লুফে নিয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেস নেতা রিপুন বোরা অভিযোগটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেশ করার পরপরই পশ্চিমবঙ্গেও শাসক দল তৃণমূল এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এ নিয়ে রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটে দুজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ইন্দ্রনীল সেন প্রশ্ন তোলেন, দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে এত বড় আপস কীভাবে সরকার হতে দিল?
মোদিকে লেখা রিপুনের চিঠি পোস্ট করে তাদের দাবি, কোনো বিদেশি নাগরিক দেশের মন্ত্রী হলে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্রে মন্ত্রী করার আগে কোনও ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’-ই কি করা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের আর এক মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের প্রশ্ন, বিদেশি একজন নাগরিক যদি ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হন দেশের নিরাপত্তার জন্য তার চেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় আর কী হতে পারে?
রিপুনের চিঠির কথা উল্লেখ করেই ব্রাত্য টুইটারে লিখেছেন, ‘রাজ্যসভার সাংসদ রিপুন বোরা সঠিক প্রশ্ন তুলেছেন। বহু সংবাদমাধ্যমে নিশীথ প্রামাণিক বাংলাদেশের নাগরিক বলে উল্লেখ রয়েছে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘এই ধরনের লোককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার আগে কি কোনো কিছুই খতিয়ে দেখা হয়নি? ভুলে গেলে চলবে না এই নিশীথের বিরুদ্ধে কতগুলো গুরুতর অপরাধমূলক মামলা চলছে। লজ্জাজনক।’
বিজেপির বক্তব্য
জবাবে রাজ্য বিজেপি বলেছে, কুৎসা না রটিয়ে কোনো প্রমাণ থাকলে দিক তৃণমূল।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু আরও বলেন, ‘তর্কের খাতিরে অভিযোগ মেনে নিলেও এটা তো ঠিক যে, নিশীথ হিন্দু। বিজেপি মনে করে, সব হিন্দুই ভারতীয়।’
আবার একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগের কোনো সারবত্তা নেই। দরকার হলে তৃণমূল এটা নিয়ে আদালতে যাক।’
এ নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্যের দুজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এমন প্রশ্ন তুলেছেন। দয়া করে তারা তথ্য-প্রমাণ দিন। কুৎসা রটিয়ে শুধু খবরেই আসা যায়।’
এর আগে বিজেপি নেতা তথা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বাংলাদেশের নাগরিক কি না, এ নিয়ে অতীতেও তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছিল।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সে বক্তব্য জোরালোভাবে অস্বীকার করার পর বিতর্কের আপাতত অবসান হলেও এখন নতুন করে একই ধরনের অভিযাগের মুখে পড়েছেন কোচবিহারের এমপি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র ‘ডেপুটি’ নিশীথ প্রামাণিক।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭২০
আপনার মতামত জানানঃ