নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে মসজিদ, মন্দিরসহ সকল উপাসনালয়ে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার সরকারি উদ্যোগের বিরোধীতায় উদ্ধট সব দাবি নিয়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিতর্কিত সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩ দল। ১৬ নভেম্বর ২০২০, সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী ওলামা লীগের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ‘মাস্ক পড়লে নামাজ হবে না, মসজিদে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না’ বলে দাবি তোলা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
৬ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ তাদের মতাদর্শের ভিত্তিতেই একটা চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠন। দেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান ও দেশের সরকারের বিরুদ্ধে তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। তারা তাদের প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দুদের হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শ্লীলতাহানী, মন্দির দখল, জোর করে মুসলমান বানানো ইত্যাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের এজেন্টরা অপপ্রচার সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে। হিন্দুদের জামাই আদরে রাখছে সরকার কিন্ত তারা সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে। কাজেই হিজবুত তাহরীরের মতো অবিলম্বে উগ্র মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ওলামা লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের সময়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, নারীদের শ্লীলতাহানী, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ৭১ এর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করার শামিল।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, ওলামা লীগের কার্যকরী সভাপতি মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল প্রমূখ।
এই নেতাদের মতে, ‘মসজিদে গেলে মাস্ক পড়তে হবে এ প্রচারণার অর্থ হলো, পবিত্র মসজিদে গেলেও করোনা হয়। মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে মসজিদে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না। নামাযের মধ্যে মুখমন্ডল খোলা রাখার নির্দেশ রয়েছে। কাজেই মাস্ক পরলে বা মুখমন্ডল ঢাকলে নামায হবে না। শরীয়তবিরোধী কাজ মাস্ক পড়ার নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। করোনার অজুহাতে পবিত্র মসজিদ ও মাদরাসা বন্ধ করা, ফাঁকা রেখে নামাজে দাঁড়ানো, ৫ জনের বেশি মুছল্লী না হওয়া, মাঠে ঈদের জামায়াত করতে না দেয়া ওহাবী-জামায়াতপন্থীদের ষড়যন্ত্রমূলক ফতোয়া। যা সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান এতে সরকারের প্রতি যারপরনাই ক্ষুব্ধ হচ্ছে। এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
এদিকে উগ্র ভাবধারা নিয়ে সক্রিয় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ নিজেদের কখনো আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন আবার কখনো সহযোগী সংগঠন বলে দাবি করলেও তার কোন স্বীকৃতি নেই। আওয়ামী লীগে এই নামে কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। এ নামে কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের কমিটিও নেই। তবে ‘আওয়ামী ওলামা লীগ’ একাধিকবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানিয়েছে তাদের অবস্থান। ক্ষমতাসীন দল এক্কেহত্রে তাদের বাধাও দেয়নি।
সর্বশেষ বিপিএল নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে ওলামা লীগ কর্মসূচি দেয়ার পর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাংসদ মো. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী ওলামা লীগ নামে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠন অথবা এই নামে কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের কমিটি নেই। কিন্তু ওলামা লীগ এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সরকারও তা মেনে নিচ্ছে।
ফাআ/আরা/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ