চওড়া করতে হবে রাস্তা। আর তার জন্য বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদ। মুহূর্তে হারিয়ে গেলে দেশের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। প্রশাসনের এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবশ্য নিন্দায় সরব হয়েছেন এলাকাবাসী।
গত শুক্রবার এই ঘটনা ঘটে ইরাকের দক্ষিণ দিকের শহর বসরায়। সম্প্রতি ওই এলাকায় শুরু হয়েছে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ।
কিন্তু তার জন্য ৩০০ বছরের প্রাচীন ওই মসজিদ যে ভাঙা হতে পারে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি স্থানীয়রা। এভাবে প্রাচীন মসজিদ ভেঙে দিয়ে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
ইরাক প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৭২৭-এ তৈরি হয় ওই মসজিদ। লাল মাটির ইটের দেওয়ালের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল ১১ মিটার উঁচু একটি মিনার। যা মসজিদটির স্থাপত্যকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল।
কিন্তু এর পাশের রাস্তাটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় নিত্যদিন সেখানে ব্যাপক যানজট হচ্ছিল। সেই কারণেই রাস্তা চওড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুক্রবার এই ইস্যুতে মুখ খোলেন বসরার গভর্নর আসাদ আল এইদানি। তার কথায়, “নিত্যদিন যানজটের জেরে সাধারণ মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছিল। রাস্তা চওড়া না করলে কোনও দিনই এই সমস্যার সমাধান করা যেত না। তাই মসজিদ ভেঙে রাস্তা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
যদিও গভর্নরের এই যুক্তি মানতে চাননি বসরাবাসী মাজেদ আল হুসেইনি। তার কথায়, “ইরাকের প্রাচীন ইতিহাস ও নিদর্শনগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।” এই নিয়ে আন্দোলনে গড়ে তোলার ডাকও দেন তিনি।
অন্যদিকে এই ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইরাকের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ আর-বাদরানি। তিনি বলেন, “এভাবে বুলডোজার দিয়ে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি ছিল। কিন্তু বসরার গভর্নর রাস্তা চওড়া করার জন্য জোর দিচ্ছিলেন। ওই কাজ করতে হলে মসজিদ অন্যত্র সরাতেই হোত।”
রবিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন ইরাকের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ আর-বাদরানি।
তবে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, মসজিদ ভাঙার আগে কর্তৃপক্ষকে এই নিয়ে বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদেরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়নি বলেও অভিযোগ।
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার চারণভূমি হল ইরাক। মধ্য প্রাচ্যের এই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইসলামীয় সভ্যতার বহু নিদর্শন। গত কয়েক বছরে যার অনেকগুলিই ইসলামিক স্টেটে জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় নষ্ট হয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ