সম্প্রতি তালিবান মূখপাত্র দাবি করেছেন, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এখন তাদের দখলে। এই দাবিতে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব মোড়লেরা। তাই কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষা করার ব্যাপারে তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই বিমানবন্দর রক্ষার্থে যা যা করণীয়, সবই করবে তুরস্ক। এই সিদ্ধান্ত তালিবানের জন্য আগফানিস্তানের ক্ষমতা দখলকে আরও কিছুটা কঠিন করে তুলবে। এদিকে, আফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের শের খান বন্দর পোর্ট তালিবানরা দখলে নেয়ার পর, দৈনিক ৩২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হচ্ছে আফগান সরকারের।
কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছে তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে তুরস্ক।
সূত্র মতে, ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার আগেই কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষা করার ব্যাপারে তার দেশের সঙ্গে মার্কিন সরকারের সমঝোতা হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, তুর্কি সেনারা কীভাবে এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষা করবে তার ‘সবদিক’ সম্পর্কে বিস্তারিত চুক্তি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার আমেরিকা ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে কথা হয়েছে এবং সেখানে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, আমরা কতটুকু দায়িত্ব গ্রহণ করব এবং কতটুকু করতে পারব না।
এর আগে গত মাসে ব্রাসেলসে ন্যাটো জোটের শীর্ষ সম্মেলনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার মার্কিন সমকক্ষ জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সাক্ষাতে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয় তুরস্ক এবং এজন্য এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান বাইডেন।
আফগানিস্তানে কর্মরত পশ্চিমা কূটনীতিক ও কর্মীদেরকে নিরাপদে দেশটি থেকে বের করে নেয়ার প্রধান রুট হচ্ছে কাবুল বিমানবন্দর। ন্যাটো ও মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তালিবানের হাতে বিমানবন্দরটির পতন হতে পারে ভেবে ওয়াশিংটন শঙ্কিত এবং এ কারণে এটির নিরাপত্তা রক্ষার ওপর বাইডেন প্রশাসন ব্যাপক জোর দিচ্ছে।
২০০১ সালে ইঙ্গো-মার্কিন হামলায় তালিবান সরকারের পতন হওয়ার পর ন্যাটো জোটের অধীনে আফগানিস্তানে কয়েকশ’ সেনা মোতায়েন করে তুরস্ক। তখন থেকে গত ২০ বছর আফগানিস্তানে শত শত তুর্কি সেনা মোতায়েন ছিল।
তালিবানের দখলে বন্দর, প্রতিদিন ক্ষতি ৩২ হাজার ডলার
আফগানিস্তানের কুন্দুজ প্রদেশের শের খান বন্দর পোর্ট তালিবানরা দখলে নেয়ার পর থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে দেশটির সরকারের। দৈনিক ২.৫ মিলিয়ন আফগানি (৩২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি) রাজস্ব হারাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আফগানিস্তানের গণমাধ্যম টোলো নিউজ। খবরে বলা হয়, যখন থেকে বন্দরের দখল নিয়েছে তালিবান এরপর থেকে সেখানে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন ৩২ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
দ্য আফগান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট জানিয়েছে, তালিবানরা শের খান বন্দর পোর্ট এবং কাস্টমস অফিস দখলের পর থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দরটি তাজিকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত।
চেম্বারের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশসমূহ বিশেষ করে কুন্দুজ প্রদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিকুল্লাহ আতাই বলেন, বন্দরে কোনো কার্যক্রম চলছে না। এই এলকায় সংঘর্ষ চলছেই। ব্যবসায়ীরা বন্দরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।
খবরে বলা হয়, এ বন্দরে প্রতিদিন ২শর বেশি যানবাহন কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য আসতো। কিন্তু বর্তমানে এ কার্যকম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪০৭
আপনার মতামত জানানঃ