সৌদি আরবের এক যুবরাজের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে গুরুতর অভিযোগ করেছেন তারই সাত নারী কর্মচারী। নারী কর্মচারীদের সৌদি যুবরাজ দাস বানিয়ে রেখেছেন, অনাহারে রাখেন— অভিযোগ ওই নারী কর্মচারীদের। এ অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন ফরাসি প্রসিকিউটরা। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
অভিযোগ জানানো ওই সাত নারীর অধিকাংশই ফিলিপাইনের। তারা ফ্রান্সে যুবরাজের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাত নারীর অভিযোগ তাদের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হতো। যুবরাজের মালিকানাধীন ওই অ্যাপার্টমেন্টে তাদের সঙ্গে দাসদের মতো আচরণ করা হতো।
ফরাসি গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ওই নারীদের সাথে নিম্নমানের আচরণ করা হয়েছে। নারীদের অভিযোগের পর সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
এছাড়া মামলার প্রসিকিউটররা অভিযোগের বিষয়ে ওই নারীদের বক্তব্য শুনেছেন। অভিযুক্ত সৌদি যুবরাজ এই মুহূর্তে ফ্রান্সে না থাকায় তার কোনো বক্তব্য নিতে পারেননি প্রসিকিউটররা। তবে যে যুবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার নাম প্রকাশ করেনি ফ্রান্সের কোন গণমাধ্যম।
ওই সাত নারীদের সৌদি আরবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা সৌদি আরব ও ফ্রান্সে যুবরাজ এবং তার পরিবারের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। অভিযোগে তারা বলেন, কয়েকজনকে ফ্লোরে ঘুমাতে হতো। যুবরাজের চার সন্তানের জন্য খাবার পরিবেশন করার সময় শুধু খাবার গ্রহণের অনুমতি ছিল তাদের।
ফ্রান্সের বেসরকারি সংস্থা এসওএস এসক্লেভসের প্রধান আনিক ফুগেরক্স বলেন, যখন প্রথম তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখন তারা সবাই ছিল অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। এ বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে। তারা সেই সময় ক্ষুধার কারণে কাঁদছিল।
এদিকে সাত নারীর করা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ফ্রান্সের আদালত। ফরাসি প্রসিকিউটরা বলছেন, বিষয়টি তারা গভীরভাবে তদন্ত করছেন।
এর আগে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের এক কর্মীকে মারধর করার অভিযোগে সৌদি আরবের প্রিন্সেস হাসসা বিনতে সালমানের ১০ মাসের স্থগিত জেল দেওয়া হয়েছিল এবং জরিমানা করা হয়েছিল ১১ হাজার মার্কিন ডলার।
সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ বহুদিনের। এনিয়ে বারবার সমালোচনাও করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি সৌদি আরবে বর্তমান কাফালা পদ্ধতিতে সংস্কার প্রয়োজন। যার মাধ্যেমে দেশটিতে গৃহকর্মী নিয়োগ করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল ইসলামী দেশ হিসেবেই পরিচিত সৌদি আরব। দীর্ঘদিনের এই গোঁড়ামির খোলস ভাঙতে শুরু করেছে দেশটি। নারীদের উপর থেকে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। নিজস্ব পরিচিতি তারা তৈরি করার অধিকার পেয়েছে। চলচ্চিত্র, গান নিয়ে দেশটির দীর্ঘদিনের কড়াকড়িও শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিনেমা হল, মিউজিক শো নিয়ে পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা বাড়ছে দেশটিতে। স্কুলে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ পাঠের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মুক্তি লাভ ঘটেছে পুরুষ অভিভাবকের কর্তৃত্ব থেকেও। আর এই পরিবর্তন আসছে ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ এর হাত ধরে।
সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানের হাত ধরে যখন নারীদের ধর্মীয় শিকল থেকে একেরপর এক মুক্তিলাভ ঘটছে, ঠিক এসময় সৌদি এক যুবরাজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সৌদি আরবে নারীদের প্রতি ধর্মীয় অনুশাসনের নামে যে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়, যেটা সৌদির মজ্জায় ঢুকে আছে, এ থেকে বের হয়ে আসার পথে এমন সংবাদ অত্যন্ত দুঃখজনক।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৭
আপনার মতামত জানানঃ