গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা ৩৭ রাষ্ট্রপ্রধানের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল মিডিয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা রিপোর্টার্স সানস ফ্রন্টিয়ারস (আরএসএফ)।
৩৭ জন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ১৭ জনকে ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার শিকারী’ আখ্যা দিয়েছে আর এস এফ। দুই মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হংকংয়ের ক্যারি ল্যাম-ও এই শিকারীর তালিকায় রয়েছেন।
কেন এদের শিকারী বলা হচ্ছে, তার কিছু কারণও তুলে ধরা হয়েছে। সেন্সরশিপ, সাংবাদিকদের জেলে পাঠানো, কোথাও সাংবাদিকদের হত্যা, আবার কোথাও হিংসায় প্ররোচনা দিয়ে সাংবাদিকদের ভীতসন্ত্রস্ত করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করছেন এই রাষ্ট্রপ্রধানরা। এমনটাই মত আরএসএফের।
আর এই তালিকায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি নাম রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
মোদী, পুতিন, কিম ছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমান, হাঙ্গেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
তালিকায় দুই নারী নেত্রীর নাম রয়েছে৷ এদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এই নারী অন্তত ২০১৪ সাল থেকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারী’ বলে মনে করছে আরএসএফ৷
২০১৮ সালে তার সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে, যার আওতায় ৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও ব্লগারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে৷ যে সাংবাদিকরা তাকে বিরক্ত করেন তিনি তাদের ধরেন বলে মনে করে আরএসএফ৷
রিপোর্টার্স সানস ফ্রন্টিয়ারস’-এর তরফে মোদীর বিষয়ে বলা হয়, ‘২০০১ সালে মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই রাজ্যকে খবর এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করে। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা দেশে প্রয়োগ করেন তিনি।’
আরও বলা হয়, ‘তার সবথেকে বড় অস্ত্র হল গণমাধ্যমে নিজের এমন ভাষণ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া যাতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ছড়িয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে দিয়ে বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করেন, যাদের হাতে সংবামাধ্যম রয়েছে।’
ভারতীয় মিডিয়ার স্বাধীনতার ওপর মোদি কীভাবে থাবা বসিয়েছেন, সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেশ করেছে সংস্থাটি।
২০০১ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদী এই রাজ্যকে সংবাদ এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই নীতিই তিনি দেশে প্রয়োগ করতে থাকেন।
এক্ষেত্রে মোদীর প্রধান হাতিয়ার হল, মিডিয়ার মাধ্যমে তার জাতীয়তাবাদী-মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। এই লক্ষ্যে তিনি বড় বড় শিল্পপতির (মিডিয়া সাম্রাজ্যের মালিকানা রয়েছে যাদের দখলে) সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা। যেমন, দেশদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের যাবজ্জীবন কারাবাসের ভয় দেখানো।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এমনকী খুনের হুমকিও।
২০১৭ সালে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ড বা মোদীর সমালোচক রানা আয়ুব ও বরখা দত্তের মতো মহিলা সাংবাদিকদের ওপর হামলা এমনকি গণধর্ষণের হুমকি।
তালিকায় প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় নেতা হিসেবে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অর্বানের নাম এসেছে৷ ২০১০ সালে আবারও ক্ষমতায় ফিরে তিনি বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করছেন বলে মনে করে আরএসএফ৷ শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ৮০ শতাংশের বেশি গণমাধ্যম কিনে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ এই রিপোর্টের সমালোচনা করে সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, আরএসএফকে ‘ফেক নিউজ উইদাউট বর্ডার্স’ ডাকা উচিত৷
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে আরএসএফ বলছে, সৌদি প্রিন্স বিন সালমানের গ্রহণ করা বিভিন্ন কৌশল মাঝেমধ্যে সাংবাদিক অপহরণ, তাদের নির্যাতন ও অন্যান্য অচিন্তনীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকে৷
তালিকায় অন্যান্যদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতার্তে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, ইরানের সুপ্রিম নেতা আলি খোমেনি, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, মিয়ানমারের মিন অং লায়িং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২২
আপনার মতামত জানানঃ