টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। মহামারিকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিশ্বব্যাপী চলছে টিকাদান কর্মসূচি। তবে প্রয়োজনীয় টিকা সংকটের কারণে টিকাদানে অনেক পিছিয়ে আছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। টিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক অসম নীতির পৃথিবী। কোনো কোনো দেশ মানুষকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি পশুদের টিকা দিচ্ছে, কোনো কোনো দেশে এখনও ৫ শতাংশ মানুষও টিকা পাইনি। বাংলাদেশেই এখন অব্দি ৩ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। এখনও সরকারকে উপহারের টিকায় নির্ভর করতে হচ্ছে। মুখাপেক্ষী হয়ে আছে উন্নত বিশ্বের মুখের দিকে।
পশুর শরীরে করোনার টিকা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
টিকা দেয়ার এই অসম নীতির সবথেকে বড় প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র। দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি এবার উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে শুরু হয়েছে পশুদের শরীরে করোনার টিকা প্রয়োগের কাজ।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি চিড়িয়াখানায় বাঘ, ভালুক এবং সিংহকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়ার পর তারা সুস্থও আছে।
দেশটিতে করোনার ভয়াবহ প্রকোপে ৬ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা বিশ্ব করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। দেশটির বহু মানুষের দ্বিতীয় টিকা নেয়াও হয়ে গেছে। মাস্ক পরা আর সেখানে বাধ্যতামূলক নয়।
মানুষের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি তাই যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষামূলকভাবে পশুদেরও করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সান ফ্র্যান্সিসকোর ওকল্যান্ড চিড়িয়াখানায় রোববার দুইটি বাঘকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম জিনজার এবং মলি। কালো ভালুক গ্রিজলিও প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে। এছাড়াও একটি পার্বত্য সিংহকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা পাওয়ার পরে প্রত্যেকর শরীর সুস্থ আছে।
ভেটেরনরি ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা জোয়েটিস পশুদের জন্য করোনার টিকা তৈরি করছে। ৭০টি চিড়িয়াখানায় প্রায় ১১ হাজার করোনা টিকার ডোজ তারা পাঠাবে বলে সংবাদসংস্থাকে জানানো হয়েছে। ওকল্যান্ডের চিড়িয়াখানাতেই প্রথম সেই কাজ সম্পন্ন হলো। সংস্থাটি জানিয়েছে, পৃথিবীর অন্য দেশেও পশুদের জন্য তৈরি করোনার টিকা তারা পাঠাতে চায়।
বাংলাদেশে টিকা পেয়েছে মাত্র দেড় কোটি মানুষ
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পহেলা জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চীনের সিনোফার্মের টিকা সারাদেশের মাত্র ৪০টি কেন্দ্রে থেকে দেয়া হবে। এছাড়া ফাইজারের টিকা সীমিত সংখ্যক থাকায় আপাতত ঢাকার মাত্র সাতটি কেন্দ্র থেকে টিকাটির প্রথম ডোজ দেয়া হবে।
সূত্র মতে, প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ২০০ ডোজ টিকা দেয়ার কথা রয়েছে। এবারে টিকার সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে নিবন্ধনের ধরনও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। সুরক্ষা ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন শুধুমাত্র সম্মুখ সারির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছাত্রছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেয়া হবে।
গণটিকাদান শুরুর পর দেশে এখন পর্যন্ত শতকরা তিন ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার কথার পাশাপাশি একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ। তবে বাস্তবে এই জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি হবে। সেই হিসাব ধরলে ১৭ কোটি জনসংখ্যা ৮০ ভাগ হলো ১৩ কোটি ৬০ লাখ। এখন এই এই জনগোষ্ঠীর ২৫ লাখকে যদি প্রতিমাসে টিকা দেয়া হয় তাহলে সবাইকে টিকা দিতে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় লাগবে।
জুন মাসের হিসেবে, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৬২০ ডোজ। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হলে লাগবে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডোজ।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/১৭২৬
আপনার মতামত জানানঃ