মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) ১০ মেগা প্রকল্পের একটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৯ বছরের প্রকল্পে ৭ বছরে এসে ব্যয় বেড়েছে ৪৫.৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ ১৬ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। যেখানে বিবিধ খাতেই বাড়ছে ১৯১ কোটি টাকা। অনুমোদিত খরচ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৫২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। দেশের অন্যান্য মেগা প্রকল্পেরও একই দশা।
প্রকল্পের দূরাবস্থা
বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হলো ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দৈনিক চাহিদা সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৩ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়িতে ২টি ৬০০ মেগাওয়াটের মোট ১২০০ মে.ও. আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধন) ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট অনুমোদন দেয়া হয়।
প্রকল্প ঋণসহ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি সমাপ্ত করার সময় ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কিন্তু এখন এটার খরচ বাড়িয়ে ৫২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৭৭ লাখ ১১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। আর প্রকল্পের মেয়াদ আরো সাড়ে ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব হচ্ছে। খরচ বেড়েছে ১৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। প্রকল্পে জাইকা থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। সিপিজিসিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
জানা গেছে, যেখানে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্তির সময় নির্ধারণ করা আছে, সেখানে ২০১৪ সাল থেকে চলতি ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৪২ শতাংশ। অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪৫.৬ শতাংশ। আর ইপিসি কাজের অগ্রগতি ৫২.১১ শতাংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোর্ট ও জেটি নির্মাণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে দৃশ্যমান। সমুদ্রগামী বিভিন্ন জাহাজ থেকে প্রকল্পের মালামাল খালাসে গত ডিসেম্বর থেকে নবনির্মিত একটি স্থায়ী জেটি ইতোমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আরেকটি জেটি নির্মাণকাজ চলমান আছে। প্রকল্প এলাকার জন্য সমুদ্র গভীর নাব্যতার চ্যানেল এবং তেল ও কয়লার জন্য পৃথক পৃথক দুটি জেটি নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ, বিভিন্ন পূর্তকাজ, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন কাজ চলমান আছে।
যে যে কারণে ব্যয়ের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, ২টি ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, প্রকল্প এলাকার জন্য সমুদ্র গভীর নাব্যতার চ্যানেল এবং তেল ও কয়লার জন্য পৃথক পৃথক দুটি জেটি নির্মাণ, স্থায়ী টাউনশিপ নির্মাণ, বিভিন্ন পূর্তকাজ, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় আইএমইডি বলছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং চ্যানেল ও জেটি নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। মূল ডিপিপিতে ব্যয় ধরা হয় ৭ হাজার ৯১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেটা এখন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৩২৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। ফলে এই অঙ্গের ব্যয় ২১ হাজার ৪১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা মোট খরচের ৮৭.৩৪ শতাংশ।
বাড়তি খরচের মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নে অতিরিক্ত কাজের জন্য ২ হাজার ৩৫০ কোটি ১৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পাওয়ার প্ল্যান্ট মাটির উন্নয়নে ব্যয় ১১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে অতিরিক্ত কাজ ও ব্যয় ভ্যারিয়েশন অর্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কার্যকর করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইপিসির অংশ বয়লার নির্মাণে ব্যয় ৬৫০ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে এই খাতে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৮ হাজার ৩৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
ইপিসি অংশে টারবাইন ও জেনারেটর নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে হচ্ছে ৬৪২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর কয়লা ও ছাই হ্যান্ডেলিং সিস্টেমের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ২২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এখানেও খরচ বাড়ছে ১৯২ কোটি ২৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ১২০ জন মাস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেখানেও বাড়ছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ট্রায়াল রান ইপিসির অংশে খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বাড়ছে ২৫২ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে ইপিসির চুক্তি মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যয় বৃদ্ধি।
স্টার্টআপ যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ইন্স্যুরেন্স স্থানীয় পরিবহন হ্যান্ডেলিং চার্জ বাড়ছে ১০৬ কোটি ৮১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। দেশী ও বিদেশী পরামর্শক সেবায় ব্যয় বাড়ছে ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ফলে পরামর্শক খাতে ব্যয় ৫০৭ কোটি ১১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট খরচের ২ শতাংশ। নির্মাণকালীন সুদ দিতে হবে ১ হাজার ৩৯২ কোটি ৬ লাখ টাকা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮২০
আপনার মতামত জানানঃ