ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশি সহ ১৭৮ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনেশিয়া নৌবাহিনী। এছাড়া দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে তারা। অভিবাসন প্রত্যাশীরা সমুদ্র পেরিয়ে ইউরোপে যাত্রা করার চেষ্টা করছিল বলে জানা যায়।
উদ্ধারকৃতদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। যারা নৌকায় করে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন। উদ্ধারকৃত অন্যরা হলো ইরিত্রিয়া, মিশর, মালি ও আইভরি কোস্টের নাগরিক।
সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে জানা যায়, দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রবিবার ২৭ জুন, ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার সময় তিউনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের উদ্ধার করে। এসময় দুটি লাশও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পরে তিউনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ যেকরি জানান, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ যাচ্ছিল। পথে তাদের নৌকা ভেঙ্গে যায় এবং সেটি ডুবে যেতে থাকে। পরে সংকেত পেয়ে তিউনেশিয়া নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাদের উদ্ধার করে।
ভূমধ্যসাগরে বাংলাদেশি অভিবাসীদের উদ্ধারের মাত্র চার দিনের ব্যবধানে আবারও ১৭৮ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনেশিয়া নৌবাহিনী। বিগত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্ধারকাজ ছিল এটি।
এর আগে গত ২৫ জুন ভূমধ্যসাগরে ভাসমান অবস্থা থেকে ২৬৪ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। পরে তিউনেশিয়া কোস্টগার্ড জানায়, ২৬৪ বাংলাদেশি ও তিন মিসরীয় নাগরিক, অর্থাৎ মোট ২৬৭ অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি নৌকায় করে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মাঝসমুদ্রে নৌকাটি বিকল হয়ে গেলে বিপদে পড়েন তারা।
এরপর এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তিউনেশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেন গুয়েরদেন বন্দরে পৌঁছাতে সাহায্য করে দেশটির নৌবাহিনী। পরে তাদের আইওএম এবং রেড ক্রিসেন্টের হাতে তুলে দেয়া হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের পথে যাত্রা করে। এ সংখ্যা গতবছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ৭০ ভাগ বেশি।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৬০ অভিবাসনপ্রত্যাশী।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় গত জানুয়ারি থেকে এক হাজারের বেশি মানুষ তিউনেশিয়ায় আটকা পড়েন। এমন মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
জীবন-জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে বসেন অসংখ্য শরণার্থী। আর উত্তাল সাগরের বুকে একের পর নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
২৪ জুনের আগে ১০ জুন ১৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনেশিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড। তারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তার আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় গত ১৮ মে ৩৬ জন এবং ২৭ ও ২৮ মে উপকূল থেকে ২৪৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনেশিয়ার কোস্টগার্ড। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে তিউনেশিয়ায় ৭০৭ বাংলাদেশি রয়েছেন।
এ ছাড়া গত মাসে লিবিয়ার অবৈধ অভিবাসন দমন বিভাগের (ডিসিআইএম) কর্মকর্তারা আলজেরিয়ার সীমান্তবর্তী মরু এলাকা দারাসে অপহরণকারীদের কবল থেকে ৮৬ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেন। তারা বেনগাজি হয়ে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার পথে অপহরণকারীদের কবলে পড়েছিলেন। তারা লিবিয়ার হাতে রয়েছেন।
মানব পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬০ বাংলাদেশি গত মে মাসে আইওএমের সহায়তায় দেশে ফেরেন। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির সহায়তায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ২ হাজার ৯০০ বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৭
আপনার মতামত জানানঃ