করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এখন কম-বেশি আতঙ্কে আছে গোটা বিশ্ব। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের পর করোনার এই ধরন এখন বাংলাদেশেও বাড়-বাড়ন্ত।
বিশ্বখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, শক্তির শীর্ষে পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। নিজের অস্ত্রে আর শান দেওয়ার ক্ষমতা নেই তার। প্রলয় ঘটিয়ে ভাইরাসটি এবার ক্লান্ত।
গত দেড় বছরে ক্রমাগত মিউটেশন ঘটিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২। আলফা, বিটা, গামা, ডেলটা একাধিক ধরন তৈরি করেছে ভাইরাসটি। সম্প্রতি পেরুতে ল্যাম্বডা ধরনের সন্ধান মিলেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ডেলটা। এর বেশি আর শক্তি বাড়াতে পারবে না ভাইরাস।
তারা বলছেন, গত দেড় বছরে সার্স-কোভ-২ তার ‘তলোয়ার’ বা স্পাইক প্রোটিনের সজ্জাবিন্যাস ও গঠন ক্রমাগত বদলেছে এবং নতুন মিউটেটেড ধরন তৈরি করেছে। এভাবেই মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে লাগাতার ধোঁকা দিয়েছে সে।
গবেষণাপত্রটির সঙ্গে যুক্ত অন্যতম বিজ্ঞানী আমেরিকার স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এরিক টোপল বলেন, ‘সব ধরনের মধ্যে ডেলটাই সবচেয়ে শক্তিশালী।’ এ বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এখানেই এর শেষ বলে মনে করছেন তারা।
এরিকের সঙ্গেই ওই গবেষণায় ছিলেন ইটালির ভাইরোলজিস্ট, পেনসিলভ্যানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবার্টো বুরিয়োনি। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণায় যা দেখছি, তাতে বলা যায়, সার্স-কোভ-২-এর ডেল্টা স্ট্রেন খুব সম্ভবত এমন অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে, তার স্পাইক প্রোটিনে আর মিউটেশন ঘটানো সম্ভব নয়। ছোটখাট বদলও নয়। এটাই হয়তো ভাইরাসের সর্বশেষ রূপ। বেশ কয়েক বছর পরে হয়তো সামান্য বদল হবে। যেমন ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয়। তাই ফ্লু-এর টিকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপডেট করতে হয়।’
কিন্তু আপাতত চিন্তা ডেল্টা স্ট্রেনকে সামলানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অন্তত ৮৫টি দেশে ছড়িয়েছে ডেল্টা। আলফা স্ট্রেন মিলেছে ১৭০টি দেশে। বিটা পাওয়া গিয়েছে ১১৯টি দেশে, ৭১টি দেশে গামা।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, আপাতত বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাবে ডেল্টাই। একে রুখতে হলে একমাত্র পথ টিকাকরণ। তাতেও হয়তো সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। কিন্তু মৃত্যুর মতো পরিণতির আশঙ্কা কম। টিকা নেয়া থাকলে বাড়াবাড়ি কম হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। দ্রুত টিকাকরণ সেরে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সূত্র: গালফ টাইমস।
এদিকে চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ফের বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলে। অন্যদিকে দৈনিক মৃত্যুতে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৮ কোটি ১১ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৯ লাখ ২৪ হাজার।
শনিবার (২৬ জুন) সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ হাজার ৫৪৪ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৬০০। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৫০ জনে।
এছাড়া, একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩২ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার। এতে মহামারির শুরু থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার ৬১৭ জনে।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৬ লাখ ১৯ হাজার ১৪৪ জন মারা গেছেন। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৯৯০ জন। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ৮৩ লাখ ২২ হাজার ৭৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার ২৭২ জনের।
অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১৮৬ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৬৯ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২৪ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে সংস্থাটি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৮
আপনার মতামত জানানঃ