শুরুতে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে সামাজিক স্টিগমা তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি যে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না এখনও। গ্রামাঞ্চলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ তুলনামূলক কম বলে স্টিগমার বিষয়টি সেভাবে সামনে আসেনি এতোদিন। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে এখন গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে সংক্রমণ। আর এর সাথে সামনে আসছে স্টিগমার উপস্থিতিও।
অনেক মধ্যবিত্ত, এমনকি উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যেও সামাজিক স্টিগমাকে কেন্দ্র করে একধরনের ভীতি বা সমাজে হেয় হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। অনেকের মধ্যেই ‘একঘরে’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর গোপন রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। এর সঙ্গে মানুষের সামাজিক মর্যাদাহানির বিষয়ও সরাসরি যুক্ত।
সাম্প্রতিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন আব্দুর রাজ্জাক (৫০) নামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগী। ধারণা করা হচ্ছে, ‘পরিবারের কেউ সংস্পর্শে না আসায়’ অভিমানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে, করোনা শনাক্ত হওয়ায় ‘লজ্জা ও ঘৃণায়’ আবদুর রাজ্জাক আত্মহত্যা করেন বলে জানান এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মৃত আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের গড়গড়ি গ্রামের মো. শাহাজুদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় গরু ব্যবসায়ী ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাসিবুল হোসেন জানান, রাজ্জাক কিছুদিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত ১৬ জুন র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন।
বাড়িতে আলাদা ঘরে রাখায় এবং তার সংস্পর্শে কেউ না আসায় পরিবারের সদস্যদের উপর অভিমান করে রোববার সকালে রাজ্জাক আত্মহত্যা করেন বলে জানান হাসিবুল।
তবে আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমার স্বামী মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে। কিন্তু সে শারীরিকভাবে সুস্থই ছিল। সে আলাদা ঘরে ছিল ঠিকই। কিন্তু আমি সবসময় দেখভাল করতাম। ভোরেও তার কাশির শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু সকালে তাকে ডাকতে গিয়ে দেখি ঘরের আড়ায় ফাঁস দিয়ে সে ঝুলছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন এ প্রসঙ্গে জানান, করোনা শনাক্ত হলে ১৭ জুন তার বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আজ সকালে আত্মহত্যার খবর পেয়ে আমি তার বাড়িতে যাই এবং পুলিশে খবর দিই। আমার ধারণা, গরু ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার কারণে লজ্জা ও ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম জানান, হাসপাতালের যেসব কোভিড রোগী ঝুঁকিমুক্ত থাকেন তাদের বাড়িতে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। আব্দুর রাজ্জাকের শারীরিক অবস্থা তুললামূলক ভালো থাকায় তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির বেলেন, রাজ্জাক বাড়িতে আসার পর পরিবারের সদস্যরা তার সংস্পর্শে না গিয়ে দূরে থেকে তাকে খাবার এবং যা প্রয়োজন দিচ্ছিলেন। এতে আব্দুর রাজ্জাক মনকষ্টে ভুগছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যরা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন এই অভিমানে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ